ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ১২:০৯ দুপুর  

ছবি সংগৃহীত

দেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। তবে এই খেলাপি কম দেখাতে এখন বেশ কৌশলী অবস্থানে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের বিদ্যমান পরিমাণের বাইরে বিরাট অংকের ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করা হচ্ছে। যেটা ব্যালান্স শিটে অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। এর ফলে খেলাপি ঋণ হিসেবে তা প্রকাশ করছে না ব্যাংকগুলো।

আবার খেলাপি ঋণ বিভিন্ন মেয়াদে রিশিডিউল করা হচ্ছে, সেখানেও পরিশোধে অনাগ্রহী ব্যক্তির এই ঋণ খেলাপি হিসেবে ঋণে গণ্য হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশানুরূপ কমছে না। একবার কিছু কমছে তো আবার বাড়ছে বা তার পরেই প্রান্তিকেই আবার বেড়ে যাচ্ছে। চলমান অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতে অব্যাহতই আছে ঋণ আদায়ে ধীরগতি।

গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পরিমাণের দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একই বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। বিরতণ করা এসব ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

পরিশোধে অনাগ্রহী ব্যক্তির এই ঋণ খেলাপি হিসেবে ঋণে গণ্য হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশানুরূপ কমছে না। একবার কিছু কমছে তো আবার বাড়ছে বা তার পরেই প্রান্তিকেই আবার বেড়ে যাচ্ছে। চলমান অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতে অব্যাহতই আছে ঋণ আদায়ে ধীরগতি

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এক বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকার বেশি। তবে তার আগের প্রান্তিক অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। যা তখন বিতরণ করা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স এবং খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা। খেলাপি কমাতে ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। বরং খেলাপি দূর করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রহীতা ও দাতার ক্ষেত্রে একইভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। আরও কঠোর হতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এই খেলাপি মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এ প্রান্তিকটিতে দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছিল খেলাপি ঋণ।

পরের প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। যেটা ছিল বিতরণ করা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সবশেষ ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আরও কিছুটা কমে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় নেমেছে। এটি বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। সে হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা কমেছে। যদিও বছরের ব্যবধানে তা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।