৫২তম বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৭:১০ বিকাল
ছবি সংগৃহীত
৫২ তম বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর শহীদের শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ বিজয় আর বাঙ্গালি জাতির সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিনিয়ে এনে দিয়েছে সেই সব শহীদকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। যা বাঙ্গালি জাতিকে এনে দেয় আত্মপরিচয়ের ঠিকানা।
ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই স্মৃতিসৌধে নাম না জানা লাখো শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, কূটনৈতিক কোরের ডিন ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ খুলে দেয়া হবে। পরে সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
জাতির গৌরব আর অহংকারের এ-দিনটিতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নামবে লাখো মানুষের ঢল। তাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহীদ বেদি। দিবসটি উপলক্ষে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের টানা কয়েকদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে এক নতুন রূপ ধারণ করেছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। লাল-সবুজের আভায় সেজেছে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা।
শেষ করা হয়েছে ধোয়ামোছা ও রং তুলির কাজ। স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন ধাপে রং তুলির আঁচড়ের আলপনায় অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধ মিনারের সম্মুখ ভাগে হেরিংবন্ড ধরে নিচু জায়গাগুলোতে সবুজ ঘাসের মধ্যে শোভা পেয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ নানা রঙের ফুল গাছের চারা। যা প্রতিবারের মতো এবারও সৌধ এলাকাকে এনে দিয়েছে রঙিন ও বর্ণিল রূপ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, উচ্চ মাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা হচ্ছে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যেকটি স্থানে কঠোর তল্লাশি করা হচ্ছে।
স্মৃতিসৌদের পরিছন্নতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কর্মের জন্য নয়, বিজয় দিবসের আনন্দটা যেন ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে।
সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, টানা কয়েক দিন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শেষে স্মৃতিসৌধ সেজেছে ভিন্নরূপে। অন্যবারের তুলনায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এবার স্মৃতিসৌধকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন পিপিএম (বার) বলেন, এই মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসবেন। এই লক্ষ্যে সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছি। পাশাপাশি এলাকায় যে জনবসতি আছে তাদের নাগরিকত্ব ফরম দিয়েছি। নতুন কোনো লোকের এলাকায় প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷ আমরা আসপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যারা এলাকার অধিবাসী সহ সকলের সাথেই কথা বলেছি। তাদের প্রতি অনুরোধ রেখেছি বহিরাগত কেউ যদি আপনাদের এলাকায় অবস্থান করে আমাদের কে অবহিত করার জন্য।
তিনি আরও বলেন,বিজয় দিবসে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই তারপরেও আমরা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সকল ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে এবং আমরা আশা করছি অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস উদযাপিত হবে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা জেলা পুলিশ প্রস্তত আছেন।
সেদিনের জন্য সড়ক ব্যাবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হয়ছে সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নির্দেশনার কথা জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার। তিনি বলেন,ঢাকা মুখী যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন বা মানিকগঞ্জ থেকে আসবেন, আমি বিশেষত অনুরোধ করবো ভোর ৪ টার থেকেই এই এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চেইঞ্জ করা হবে, সেদিনের সার্বিক নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বসাধারণ এইদিকে আসবেন, ব্যাপক জমায়েত থাকবে সে কারণে, উত্তরবঙ্গ থেকে যে গাড়িগুলো আসবে, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে চন্দ্রা হয়ে গাজীপুর হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবেন এবং মানিগঞ্জ থেকে যে গাড়িগুলো আসবে তাদের প্রতি ও আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যাতে নবীনগর হয়ে আশুলিয়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে এবং ঢাকা থেকে যারা মানিকগঞ্জ বা উত্তরবঙ্গে যে গাড়িগুলো যাবে এগুলো আমরা অনুরোধ করবো যে গাবতলি হয়ে বেড়িবাধ হয়ে, আশুলিয়া হয়ে অথবা উত্তরা হয়ে আশুলিয়া হয়ে তাদেরকে উত্তরবঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য বা মানিকগঞ্জে আসলেও তারা আশুলিয়া হয়ে নবীনগর মোড় হয়ে এই রুট টি ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন,আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমরা সৌধ এলাকায় ৪স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছি। সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর সূর্যদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।