আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস’সহ চারজন আরসা সন্ত্রাসী র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৮:৪০ রাত
ছবি সংগৃহীত
সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস’সহ চারজন আরসা সন্ত্রাসী কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন জামতলী এলাকা থেকে র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার; বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার
বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা’র সন্ত্রাসীগোষ্ঠি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে আরসা’র সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে প্রতীয়মান। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের অপরাধ দমনে সার্বক্ষনিক মনিটরিং’সহ র্যাব-১৫ শুরু থেকে আরসা’র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছে। এই বছর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেল এর প্রধান, স্লীপার সেল ও ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার, অর্থ সমন্বয়ক, ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডারসহ সর্বমোট ৭৬ জন আরসা’র সক্রিয় সদস্যকে র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতারপূর্বক বিচার প্রক্রিয়ার নিমিত্তে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ উখিয়ার ১৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা হতে গ্রেফতারকৃত আরসা’র স্লীপার সেল ও ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ডাক্তার হামিদ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা’র সদস্যরা উখিয়া থানাধীন জামতলী ১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে বৈঠক করতঃ পরিকল্পনা করছে। নির্ভরযোগ্য এমন তথ্যের প্রেক্ষিতে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ অনুমান ২১.০০ হতে মধ্যরাত পর্যন্ত র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল উখিয়ার জামতলী ১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আরসা সদস্যরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে এবং আত্মরক্ষার্থে বেশ কিছুক্ষণ ধরে র্যাবের সাথে আরসা’র গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে নাশকতার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত ঘরটিকে র্যাবের আভিযানিক দল চারিদিক থেকে ঘেরাও করে সেখান থেকে আরসা’র অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস, ক্যাম্প-৪ এর বি ব্লকের জিম্মাদার মফিজুর রহমান প্রকাশ মুজিয়া, এনায়েত উল্ল্যাহ এবং মোহাম্মদ জাবের প্রকাশ আমানুল্লাহ উল্ল্যা’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা ০১টি বিদেশী পিস্তল ম্যাগাজিনসহ, ০২টি ওয়ান শুটার গান, ০২টি দেশীয় তৈরী এলজি, ০৪ রাউন্ড বিদেশী পিস্তলের কার্তুজ, ০৫টি এলজি’র কার্তুজ, বড় ককটেল ০৫টি, ছোট ককটেল ০৮টি, ০৪টি স্মার্টফোন এবং ০২টি পকেট নোটবুক, ০২টি হিসাবের খাতা, ৪৪ পৃষ্ঠাযুক্ত হিসাবের লিস্ট খাতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সাথে থাকা আরও চারজন আরসা সদস্য পলায়ন করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত পরিচয়:
(১) মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস (৩৭), পিতা-নজিব আহম্মদ, ক্যাম্প-১০, ব্লক-এইচ/৪২, উখিয়া, কক্সবাজার।
(২) মফিজুর রহমান প্রকাশ মুজিয়া (৩৮), পিতা-আব্দুল মোতালেব, ক্যাম্প-৪, ব্লক-বি/২৩, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার।
(৩) এনায়েত উল্ল্যাহ (২৬), পিতা-হাসু মিয়া, ক্যাম্প-১ ওয়েস্ট, ব্লক-এ/৪, উখিয়া, কক্সবাজার।
(৪) মোহাম্মদ জাবের প্রকাশ আমানুল্লাহ উল্ল্যা (২৭), পিতা-আঃ রহমান, ক্যাম্প-৪, ব্লক-সি/২৫, উখিয়া, কক্সবাজার।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস ২০১৭ সালে পরিবারসহ মায়ানমারের মংডু থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প-১০, ব্লক-এইচ/৪২ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে আসার পর তার বাসার পাশে থাকা মারকাস এর অফিসের লোকজনের সাথে মেলামেশা করতে করতে একপর্যায়ে বন্ধু মৌলভী সৈয়দ আলম এর কোরআন শপথের মাধ্যমে মোঃ ইউনুস প্রকাশ মাস্টার ইউনুস আরসায় যোগদান করে। পরবর্তীতে সে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গাদেরকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরসায় যোগদান করতো এবং প্রশিক্ষণের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠাতো। যে সকল আরসা সদস্যরা আরসায় যোগদানের পর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য বার্মা গমন করে থাকে তাদের পরিবারকে মাসিক খরচ বাবদ প্রতিমাসে ৫,০০০/- টাকা এবং প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাম্পে হাজির হলে পরবর্তী ০৬ মাস ৩,৫০০/- টাকা করে প্রদান করতো এই মাস্টার ইউনুছ। প্রদানকৃত এই অর্থ মাস্টার নাজিমুদ্দিন বিভিন্ন সময়ে বিকাশ এবং কখনো কখনো সরাসরি মাস্টার ইউনুসকে ক্যাশ টাকা প্রদান করতো। গ্রেফতারকৃত মাস্টার ইউনুস বার্মার মংডুতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং হিসাব-নিকাশে দক্ষ বিধায় ক্যাম্প এলাকায় প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে টাকা বিতরণ করার ফলে আরসায় ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে আরসার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত ছিল। উক্ত গ্রুপসমূহের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাকে প্রশিক্ষণসহ শরণার্থী শিবিরে আরসার কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করতো। গ্রেফতারকৃত মাস্টার ইউনুসের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যরা আরসার নতুন সদস্য যোগদানে উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি নেতৃত্বদানকারীদের নির্দেশনা মোতাবেক কেউ কাজ না করলে কিংবা মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে মারামারি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করতো। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ০৪টি গ্রুপে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাদের মধ্যে আরসা, আরএসও, নবী গ্রুপ এবং ইসলাম গ্রুপ।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো মধ্যে আরসার আধিপত্য বিস্তার ব্যাপক হারে বৃদ্ধির জন্য গতকাল রাতে তারা বড় ধরণের একটি নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতারকৃত মাস্টার ইউনুস এর নেতৃত্বে থাকা আরসার অন্যান্য সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নাশকতার পরিকল্পনা, নাশকতা সৃষ্টি, অরাজকতা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, হামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। তাদের নাশকতায় শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে অবৈধ পথে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও নাশকতার জন্য ব্যবহৃত বিস্ফোরক সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মফিজুর রহমান প্রকাশ মুজিয়া ২০১৭ সালে টেকনাফের লেদা সীমান্ত হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প-৪, ব্লক-বি/২৩ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে ২০২২ সালের প্রথমে আরসা নেতা হাফেজ কেফায়েত উল্লাহ এবং আতাউল্লাহ আসাদ এর মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে। সে আরসায় যোগদানের পর ক্যাম্প-৪ এর বি ব্লকের জিম্মাদার হিসেবে কাজ করতো। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত এনায়েত উল্ল্যাহ এবং আমান উল্ল্যাহ আরসা’র সক্রিয় সদস্য। আরসা’য় যোগদানের পর তারা মায়ানমারের অভ্যন্তরে অস্ত্র চালনার উপর প্রশিক্ষণ লাভ করে। তারা ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং শরণার্থী হিসেবে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করতো। আরসার নেতৃত্বদানকারীদের নিকট হতে প্রাপ্ত নির্দেশনা মোতাবেক আধিপত্য বিস্তার ও শরণার্থী শিবির কেন্দ্রিক বিভিন্ন অপরাধে সাথে এনায়েত এবং আমান উল্ল্যাহ জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।