উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও'র প্রেস নোট:
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি: ইএসডিও-ই.ডি ডক্টর মুহাম্মদ শহীদ উজ জামান
প্রকাশিত: আগস্ট ০১, ২০২৫, ০৫:০৬ বিকাল

রংপুরে একশান টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের বিভাগীয় স্টাডি শেয়ারিং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
(৩০ জুলাই ২০২৫) জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে রংপুরে অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় পর্যায়ের স্টাডি শেয়ারিং সেমিনার। রংপুরের আরডিআরএস গেস্ট হাউজে আয়োজিত এ সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইএসডিও এবং হেলভেটাস বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদন যার শিরোনাম “উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্ত করে টেকসই ও অভিযোজনযোগ্য জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি ও চর্চা বিষয়ক একটি সমন্বিত গবেষণা”। গবেষণায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজনযোগ্য কৃষি কৌশল ও নীতিমালা গ্রহণ করা যেতে পারে, যা সরাসরি সুবিধা এনে দেবে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকে।
ইএসডিও’র পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইএসডিও’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান । তিনি বলেন, “একশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি যদি যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়, তাহলে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষকদের রক্ষা করা সম্ভব।”
হেলভেটাসের পক্ষে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিল্টন কুমার সাহা, বিশেষজ্ঞ, পানি খাদ্য ও জলবায়ু বিভাগ। তিনি বলেন, ’জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীরা। তাই তাদের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি দরকার।’
কি নোট স্পিচ এ হেলভেটাস বাংলাদেশের পানি, খাদ্য ও জলবায়ু ডোমেইনের ব্যবস্থাপক আয়াতুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এখন আর বিকল্প নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য পথ।’
গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রান্তিক কৃষক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। গবেষণায় ১০টি জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং ৩৫০ জন কৃষকের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জলবায়ু-স্মার্ট প্রযুক্তির মধ্যে জল-সাশ্রয়ী চাষাবাদ, জৈব সার ব্যবহার, লবণসহিষ্ণু ধান ও সবজি জাত, উন্নত বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি প্রভৃতি উপায় চিহ্নিত করা হয়।
হেলভেটাসের আয়াতুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় প্যানেল ডিসকাসনে অংশ নেন মো: সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর, প্রফেসর ড. মো. শোয়াইবুর রহমান, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, ড. রকিবুল হাসান, প্রধান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, রংপুর, ড. তুহিন ওয়াদুদ, কলামিষ্ট ও নদী গবেষক এবং ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, নির্বাহী পরিচালক, ইএসডিও। তাঁরা বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার’ বা স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি শুধু উপকারী নয়, বরং অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
সেমিনারের সম্মিলিত আহ্বান:
কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবন্ধী কৃষকদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গবেষণানির্ভর সমাধান তৈরি করতে হবে।
জলবায়ু অভিযোজনকে জাতীয় উন্নয়ন নীতির কেন্দ্রে আনতে হবে।
সেমিনারের মাধ্যমে একশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত অঞ্চলগুলোতে জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমন্বিত উদ্যোগের সম্ভাবনা আরও জোরালোভাবে উন্মোচন করতে হবে।
ইএসডিও’র একশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গোলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চরাঞ্চলের প্রডিউসার গ্রুপ প্রতিনিধি, স্থানীয় সেবাদানকারী সংগঠনের প্রতিনিধি, উপজেলা জলবায়ু পরিষদের প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি, আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি, ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, কৃষি বিভাগের বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি, মিডিয়া প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি এবং বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধিবৃন্দ ।