ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি প্রসঙ্গ

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩, ১২:৫৫ দুপুর  

ছবি সংগৃহীত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একটি চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘকে। চিঠিতে সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশকে বিভিন্ন মহল থেকে অযৌক্তিক রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ তোলা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে গঠনমূলক ভূমিকার। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো এই চিঠি জাতিসংঘ এখনো খুলে দেখেনি বলে জানিয়েছেন বৈশ্বিক সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সংস্থাটির নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমি চিঠিটি দেখেনি। আমি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে এরই মধ্যে যা বলেছি তাই পুনর্ব্যক্ত করব।

জাতিসংঘের মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট আর্ল কোর্টনে র‌্যাট্রের কাছে গত ১৯ নভেম্বর চিঠিটি পাঠান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে চিঠিটি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের অফিসে পাঠানো হয়।

চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের একজন ক্রুসেডার এবং তিনি দেশের মানুষের ভোট, খাদ্য ও সুন্দর জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু একই সঙ্গে বিক্ষোভের নামে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি পোড়ানো ও মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনাগুলো তিনি সহ্য করবেন না, যা বিরোধী দল নিয়মিত করে আসছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরের মেয়াদে হাজারও নির্বাচন, উপনির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, আঞ্চলিক নির্বাচন ও মেয়র নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। খুবই ছোটোখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া সব নির্বাচনই ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও মানুষের সম্মান রক্ষায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। তা সত্ত্বেও আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে ‘অযাচিত, অযৌক্তিক ও আরোপিত রাজনৈতিক চাপের’ মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা আশা করব জাতিসংঘ ও তার সেক্রেটারিয়েট, সংস্থা ও স্থানীয় কার্যালয়গুলো বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি উদ্যমী ও সহযোগিতামূলক মনোভাবসম্পন্ন সদস্য রাষ্ট্র। আমরা প্রবলভাবে আশাবাদী যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রগতি ও জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা ও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

‘আমরা আরও প্রত্যাশা করব যে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা পক্ষপাতহীনতা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে চলে সংস্থাটির গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখবে। যদি তাদের প্রতিবেদনগুলোতে ভুল তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠতার অভাব থাকে তাহলে তারা তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে,’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

জাতিসংঘে পাঠানো এই চিঠি কিভাবে গণমাধ্যম পেলো সেটা নিয়ে পরে ক্ষোভ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সিলেটে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো থ্যাংকস লেটারটি (চিঠি) গণমাধ্যমে ছাপা উচিত হয়নি। জাতিসংঘ সফর শেষে প্রতি বছরই এ ধরনের চিঠি দেয়া হয়। এটা একান্তই ব্যক্তিগত, কিভাবে তা গণমাধ্যমে ছাপা হয় বোধগম্য নয়। যারা ছাপছে তারা দেশের শত্রুর মতো আচরণ করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে গিয়েছিলাম সেপ্টেম্বর মাসে, সেই সময় অনেকের সঙ্গেই সাক্ষাৎ হয়। আমাদের একটি রেওয়াজ আছে যাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়, দেখা-সাক্ষাৎ হয় তাদের একটি ধন্যবাদপত্র দেওয়ার। এবারো সেটাই হয়েছে। ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেসব কথাবার্তা চিঠিতে উল্লেখ ছিল। যা একান্ত ব্যক্তিগত চিঠি। এটা খামাখা একটি পত্রিকা ছেপে দিয়েছে। এটা বড় লজ্জার বিষয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জানি না এটা কিভাবে হলো, দেশে কিছু লোক আছে যারা দেশের শত্রুর মতো আচরণ করছে। বাহবা পাওয়ার জন্য যা পাচ্ছে তাই গণমাধ্যমে নিয়ে আসছে। এটা হওয়া উচিত নয়। এটা খুব দু:খজনক।

পোশাক খাতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব খামাখা। এমন কোনো তথ্য নেই। কিছু বিপথগামী লোক নির্বাচন বানচাল করতে এসব কথা বলে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব যারা করছে তারা তাদের প্রভুদের খুশি করতে গাজার মানবিক বিপর্যয়, হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কথা বলছে না। এরা মানুষ নয় অমানুষ। তারা নির্বাচনকে ভয় পায়। তাদের জনসমর্থন নেই। তারা জনগণের জন্য কোনোদিন আন্দোলন করেনি।