ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক, পরবর্তীতে ঘাতকম স্বামী র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৮:২৫ রাত  

ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ হাছিনা বেগম’কে নৃশংসভাবে হত্যা” শীর্ষক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামী টিটুল মোল্লা’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।
 
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন ছোট খারদিয়া এলাকায় বসবাসকারী মছলেম খলিফা (৬৮) এর মেয়ে ভিকটিম মোছাঃ হাছিনা বেগম (৩০) এর সাথে বিগত ১২ বছর পূর্বে মোঃ টিটুল মোল্লা (৪৫), পিতা-আকমাল মোল্লা, সাং-বাস্তপট্টি, থানা-নগরকান্দা, জেলা- ফরিদপুর এর ছোট ভাই মোঃ ফরহাদ মোল্লা (৩৫) এর বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে হামিদা আক্তার (৬) নামক একটি কন্যা সন্তান আছে। যৌতুক লোভী টিটুল মোল্লা ও ফরহাদ মোল্লাসহ তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই ভিকটিম হাছিনাকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো।
 
ইতিপূর্বে বাদী তার মেয়ের সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে মেয়ের জামাই ফরহাদ মোল্লা’কে ব্যবসা করার জন্য ২,০০,০০০/- টাকা প্রদান করে। তার কিছুদিন পর ফরহাদ পুনরায় মোটরসাইকেল কেনার জন্য আরো ২,০০,০০০/- টাকা যৌতুক চায়। বিষয়টি হাছিনা তার বাবাকে জানালে সে তার মেয়ের জামাইকে ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করে। বাকি ১,৫০,০০০/- টাকার জন্য টিটুল মোল্লা ও ভিকটিমের স্বামী ফরহাদ মোল্লা ভিকটিম হাছিনাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাধ হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ০১/০৬/২০২৩ ইং তারিখ মাঝরাতে ঘটনাস্থল ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানাধীন বাস্তপট্টি এলাকা আসামি মোঃ ফরহাদ মোল্লা’র বসত ঘরে ভিকটিম হাছিনা’কে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুরতর মারধর করিয়া নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে উক্ত হত্যার ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ভিকটিম হাছিনার গলায় গামছা পেঁচিয়ে গামছার অপর প্রান্ত ঘরের বেড়ার সাথে বেঁধে রাখে, যাতে মনে হয় ভিকটিম আত্মহত্যা করেছে। অতঃপর নগরকান্দা থানা পুলিশ ভিকটিমের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে যাতে ভিকটিমের দেহের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ভিকটিমের মৃতদেহের ময়না তদন্তের জন্য লাশ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
 
উক্ত হত্যাকান্ডের পর ভিকটিমের পিতা মছলেম খলিফা (৬৮) বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানায় ভিকটিমের স্বামী ফরহাদ মোল্লা ও তার বড় ভাই টিটুল মোল্লাসহ ০৫ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের কেরন যার মামলা নং-০২, তারিখ- ০১/০৬/২০২৩ইং, ধারা-১১(ক)/৩০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩। মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।
 
নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করায় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
 
এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল গতকাল ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৬:০৫ ঘটিকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানাধীন বাস্তপট্টি এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা এলাকার চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ মোছাঃ হাছিনা বেগম’কে যৌতুকের জন্য নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত
 
পলাতক আসামী মোঃ টিটুল মোল্লা (৪৫), পিতা-আকমাল মোল্লা, সাং-বাস্তপট্টি, থানা-নগরকান্দা, জেলা-ফরিদপুর'কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামী উক্ত হত্যাকাÐে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।