ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা বাড়ছে স্বয়ংক্রিয় যানের

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৩:৫০ দুপুর  

ছবি সংগৃহীত

স্বয়ংক্রিয় যানের প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি বাজারে আনার উপযুক্ত হয়নি৷ জার্মানির দুটি কোম্পানি অপেক্ষা না করে ‘টেলি-ড্রাইভিং’ প্রযুক্তি চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ড্রাইভারের অভাবের কারণে অনেক কোম্পানি বিপুল আগ্রহ দেখাচ্ছে৷

শহরের রাজপথে যেন ভুতে গাড়ি চালাচ্ছে৷ ট্রাকেও কোনো চালক নেই৷ ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, আজই এমনটা সম্ভব৷ চালকরা কয়েক কিলোমিটার দূরে অফিসে বসে কাজ করছেন৷ জার্মানির দুটি স্টার্টআপ কোম্পানি সেই প্রযুক্তি সৃষ্টি করছে৷

এর মধ্যে মিউনিখের ‘ফ্যার্নরাইড’ কোম্পানি লজিস্টিক্স ক্ষেত্রের ট্রাকের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে৷

অন্যটি হলো বার্লিনের ‘ভাই’ কোম্পানি৷ সাধারণ ব্যক্তিগত গাড়িকে স্বচালিত করতে চায় তারা৷ যাকে বলে ‘ডোর টু ডোর’ পরিষেবা দেওয়াই ‘ভাই’ কোম্পানির উদ্দেশ্য৷ এর আওতায় এক টেলি-চালক দূরে বসেই গ্রাহকের কাছে ইলেকট্রিক গাড়ি পৌঁছে দেবেন৷ গ্রাহক সেই গাড়ি নিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে টেলি-চালককে সেটি ফেরত দেবেন৷ ফলে পার্কিংয়ের প্রয়োজন থাকছে না৷ ট্যাক্সি বা উবারের তুলনায় গ্রাহকের ব্যয়ও কম হবে৷

টোমাস ফন ডেয়ার ওয়ে ‘ভাই’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ তিনি এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বচালিত ট্যাক্সি তৈরির কাজে সক্রিয় ছিলেন৷ এবার তিনি এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে টেলিড্রাইভিংয়ের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন৷ ফন ডেয়ার ওয়ে মনে করেন, অটোনোমাস ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে এটা এমন এক ভিন্ন কনসেপ্ট, যা অনেক দ্রুত বাজারে আনা সম্ভব৷ এভাবে সমাজে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা ভাঙা যাবে৷ অটোনোমাস প্রযুক্তি কোনো এক সময় কাজ করবে, সেই আশায় বসে থাকতে হবে না৷

আলিনা প্রেস্তি অন্যতম প্রথম টেলি-ড্রাইভার৷ তিনি অফিস থেকেই একটি গাড়ি চালাচ্ছেন৷ মনে হয় তিনি যেন চালকের আসনে বসে আছেন৷ গাড়িতে লাগানো ক্যামেরার বদৌলতে ৩৬০ ডিগ্রি, অর্থাৎ চারিদিক দেখা যাচ্ছে৷ ওয়্যারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে৷ যানটি একাধিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত৷ অর্থাৎ একটি কাজ না করলেও ক্ষতি নেই৷ জরুরি অবস্থায় প্রেস্তি একটি বোতাম টিপে যানটিকে থামাতে পারেন৷ তার মতে, টেলি-ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা আসল গাড়ি চালানোর মতো৷ আলিনা বলেন, আমি পুরোপুরি সজাগ রয়েছি৷ গাড়িতে মাইক্রোফোন বসানো রয়েছে৷ অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়ি বা যে কোনো শব্দ আমি আমার হেডফোনে শুনতে পাই৷

‘ভাই’ কোম্পানি গাড়ির ক্ষেত্রে যা পরীক্ষা করছে, ‘ফ্যার্নরাইড’ ট্রাকের ক্ষেত্রেও সেই চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এস্টোনিয়ার মুগা বন্দরে এমন পরীক্ষা চলছে৷ প্রায় ৮০ শতাংশ সময়ে ট্রাক স্বাবলম্বিভাবে চলছে৷

শুধু মাল তোলা ও খালাস করার সময়ে টেলি-ড্রাইভার হাল ধরছেন৷ এভাবে তিনি একই সঙ্গে চারটি ট্রাকের দায়িত্ব পালন করতে পারেন৷ ২৪টি পর্যন্ত ট্রাক এভাবে চালনা করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷ শেংকার ও ফলক্সভাগেন কোম্পানিও নিজেদের সাইটে ‘ফ্যার্নরাইড’ কোম্পানির কয়েকটি ট্রাক কাজে লাগাচ্ছে৷

হেন্ড্রিক ক্রামার কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ জার্মানিতে কয়েক হাজার ট্রাক ড্রাইভারের অভাবের কারণে তার প্রযুক্তি লজিস্টিক্স কোম্পানিগুলির কাছে বিশেষ কদর পাচ্ছে৷ ক্রামার মনে করেন, শিল্পক্ষেত্র বিশাল চাপের মুখে পড়েছে৷ ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা না করে এখনই আমাদের ট্রাক কাজে লাগাতে পেরে গ্রাহকরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ৷ তবে তারা যত দ্রুত সম্ভব বড় আকারে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে চায়৷ সেই চাহিদার সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে সরবরাহ করতে পারছি না৷ গ্রাহকদের আগ্রহ আমাদের সরবরাহের ক্ষমতার তুলনায় বেশি৷ কোম্পানি হিসেবে এটা সত্যি ভালো সমস্যা বলা চলে৷

‘ফ্যার্নরাইড কোম্পানির চালকের অভাব নেই৷ ইয়োসেফ মানকা প্রথম ৪০ জন টেলি-ট্রাকারদের একজন৷ পিঠের ব্যথার কারণে তিনি ট্রাক ড্রাইভারের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ রাজপথে বাম্পের ধাক্কা তাকে কষ্ট দিয়েছে৷ এখন তার জীবন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে৷ মানকা বলেন, ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের থেকে দূরে একা থাকতে হতো৷ ফলে সবারই কষ্ট হতো৷ আর এখন আমি নিজের ইচ্ছামতো সপ্তাহান্ত কাটাতে পারি৷ শনিবার কোথাও ট্রাক পরিষ্কারের মতো কাজ করতে হয় না৷ অথবা শনিবার বাসায় ফিরতে হয় না৷ এখন সময়মতো অফিস থেকে বাসায় ফিরি৷

‘ফ্যার্নরাইড’ কোম্পানি ভবিষ্যতে হাইওয়ের উপরেও ট্রাক চালাতে চায়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাজপথে টেলি-ড্রাইভিং কতটা নিরাপদ হবে?

দুর্ঘটনা গবেষক হিসেবে সিগফ্রিড ব্রকমান সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন৷ তার মতে, শহরের রাজপথের পরিস্থিতি সত্যিই অত্যন্ত জটিল৷ সেখানে আমাকে ৩৬০ ডিগ্রি নজর রাখতে হয়৷ কেউ কম্পিউটারে বসে সত্যি সেটা করতে পারেন কিনা এবং সব সময়ে সজাগ থাকতে পারেন কিনা, আমি সে বিষয়ে নিশ্চিত নই৷ আউটোবান বা হাইওয়ের উপর সেই কাজ অনেক সহজ, কারণ সেখানকার পরিবহণ কাঠামো ততটা জটিল নয়৷ আমার মতে, সেটা সত্যি করা সম্ভব৷ যতদিন না সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে, ততদিন এই প্রযুক্তি সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে৷

‘ভাই’ কোম্পানি এখনো জার্মান কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে৷ সেটা নিশ্চিত নয় বলে কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস শহরে একটি শাখা খুলেছে৷ প্রয়োজনে সেখানেই কাজ শুরু করা যেতে পারে৷ কিন্তু ফন ডেয়ার ওয়ে ঠিক সেটাই চান না৷ ইউরোপকেই টেলি-ড্রাইভিংয়ের পথিকৃৎ করে তোলাই তার স্বপ্ন৷