ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিউজিল্যান্ড বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা শান্তর

স্পোর্টস ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৮:৪১ রাত  

ছবি সংগৃহীত

ড্রেসিং রুমের বিপরীত প্রান্তের নেটে বেশ কিছুক্ষণ ডেভিড হেম্পের থ্রো ডাউনে ব্যাটিং করলেন মাহমুদুল হাসান জয়। এক পর্যায়ে কাছেই থাকা টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালকে বললেন, তার নেটে একজন স্পিনার দিতে। এই কথা শুনতে পেয়ে পাশের নেটে থাকা মুশফিকুর রহিম বললেন, ‘তুই আমারটায় আয়। আমার প্রায় শেষ।’ 

মুশফিক-জয়ের এই ব্যাটিং সেশন চলাকালে সেন্টার উইকেটে স্পিনারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় রাঙ্গানা হেরাথকে। সবার আগে মাঠে ঢুকে তাইজুল শুরু করেন সোমবারের অনুশীলন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন হাসান মুরাদ, নাঈম হাসানরা। তিন স্পিনার বোলিং করতে থাকেন পালাক্রমে। তবে তাইজুলের একেক ডেলিভারির মাঝে একাধিক বল করতে থাকেন মুরাদ। তার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে দেখা যায় হেরাথকেও। 

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের টুকরো টুকরো ছবি এসব। বাংলাদেশ টেস্ট দলের পালাবদলের বার্তাও যেমন মিশে থাকল এসবে। যেখানে নিজের ব্যাটিং শেষ হওয়ার আগেই জয়কে ডেকে নেন মুশফিক। তরুণ মুরাদের জন্য বাড়তি সময় ছেড়ে দেন তাইজুল। 

এমন পালাবদলের মধ্য দিয়েই মূলত আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে পা রাখছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল। ব্যাটিংয়ে নেই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস। বোলিংয়ে অনুপস্থিত তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন। ফলে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দল নিয়েই এবার নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। 

কিউইদের এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন বাংলাদেশ দলও। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ় কণ্ঠে নিজ দলে ওপরই আস্থা রাখলেন শান্ত।

“চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। তবে আমাদের যে দল, যে কম্বিনেশন আছে, আমি আশাবাদী, এই দুই ম্যাচ খুব ভালো করব আমরা। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ভালো করার খুব সম্ভাবনা আছে। সবাই ম্যাচ দুটি জেতার পরিকল্পনা করছে। আমরা বিশ্বাস করি জিততে পারি, জেতার জন্যই খেলব। সবার মধ্যে ওই বিশ্বাস আছে।” 
সিরিজ জয়ে চোখ রেখে নতুন যাত্রায় বাংলাদেশ

শুধু এই সিরিজ নয়, শান্তর দৃষ্টি আরও সুদূরে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দুই চক্রে ১৯ ম্যাচে স্রেফ একটি জয়ী বাংলাদেশ এবার ঘরের মাঠে সব ম্যাচ জিততে চায়। শুধু বলার জন্যই বলা নয়, শান্তর বিশ্বাস সেই সামর্থ্যও আছে তাদের।

 “টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে আমাদের। ঘরের মাঠে ম্যাচগুলো জিততে হবে। এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। (দেশে) যে কোনো দলের বিপক্ষে জেতা। এরপর দেখতে হবে, দেশের বাইরে কীভাবে অন্য দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।”

এই অভিযানে প্রথম সিরিজে বাংলাদেশকে খেলতে হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে এক ঝাঁক পরিবর্তন নিয়ে। উদ্বোধনী জুটিতে জাকির হাসানের সঙ্গে জুটি বাঁধতে এগিয়ে থাকবেন জয়। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনেও খুব বেশি ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি স্কোয়াডের আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামকে।

ব্যাটিং লাইনআপের পরের তিনটি জায়গা নির্ধারিত- শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম। লিটনের জায়গায় কিপিং গ্লাভস থাকবে নুরুল হাসান সোহানের হাতে। স্পিন বিভাগে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে অবধারিতভাবেই থাকবেন তাইজুল। আরও একজন স্পিনার খেলাতে চাইলে মুরাদের চেয়ে হয়তো সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে সর্বোচ্চ ৩৬ উইকেট নেওয়া নাঈম হাসানকেই বেছে নেবে দল। কিংবা এখানে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যানও বেছে নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে অভিষেক হতে পারে শাহাদাত হোসেনের।

পেস আক্রমণে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের সঙ্গে সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদের মধ্যে খেলতে পারেন যে কোনো একজন। 

নতুন চেহারার এই দল নিউ জিল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ সামলাতে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানান শান্ত। 
সিরিজ জয়ে চোখ রেখে নতুন যাত্রায় বাংলাদেশ

“একদম নতুন দল বলব না। তবে অভিজ্ঞতা কম। অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটা (পালাবদল) একটা না একটা সময় হবেই। যারা এতদিন খেলেছেন, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই… মুশফিক ভাই এখনও খেলছেন, একটা সময় তারা খেলবেন না। আমরা নতুন ও তরুণ যারা আছি, তাদের জন্য সুযোগ। সবার এই চ্যালেঞ্জ নেওয়া উচিৎ এবং সবাই এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। দলের সবাই সেভাবেই পরিকল্পনা করছে।” 

উইকেট বিবেচনায় অবশ্য বাংলাদেশের একাদশে স্পিন-পেস কম্বিনেশনে রদবদল হতেও পারে। ম্যাচের আগের দিন লম্বা সময় ধরে উইকেট দেখলেও, এই সম্পর্কে তেমন কিছু খোলাসা করেনি বাংলাদেশ দল। নিউ জিল্যান্ড দলও জানায়নি উইকেট নিয় বিশদ কিছু।

প্রায় পাঁচ বছর আগে এই মাঠে হয়েছ এখন পর্যন্ত একমাত্র টেস্ট। ওই ম্যাচ থেকে তাই তেমন তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সিলেটের মাঠে জাতীয় লিগের ম্যাচগুলো থেকে পাওয়া যায় স্পিন আধিপত্যেরই বার্তা। নিউ জিল্যান্ডের ভাবনাও এমন কিছু তারাও নেমে যেতে পারে তিন জন স্পিনার নিয়ে। 

পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে আসায় ব্যাটিং নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয় তাদের। বরং ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, ড্যারিল মিচেল, টম ল্যাথামরা বাংলাদেশের জন্য হতে পারেন বড় মাথাব্যথার কারণ। তবে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় স্বাগতিকদের সম্পর্কেও সচেতন নিউ জিল্যান্ড।
সিরিজ জয়ে চোখ রেখে নতুন যাত্রায় বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলনে টিম সাউদি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সব কিছু সামলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই দুই ম্যাচে ভালো করতে মরিয়া তারা।

“(টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের) নতুন চক্র শুরু করাটা রোমাঞ্চকর। টেস্ট খেলার জন্য এটি (বাংলাদেশ) কঠিন জায়গা। এই কন্ডিশনে বাংলাদেশ শক্ত দল। আমরা বছরের শুরুর দিকে সবশেষ টেস্ট খেলেছি। সবশেষ (চ্যাম্পিয়নশিপ) চক্র আমাদের প্রত্যাশানুযায়ী যায়নি। প্রথম চক্রে সম্পৃক্ত থাকা ক্রিকেটাররা জানে, এই চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করা কতটা স্পেশাল।”

“এতটা সহজ নয় (পূর্ণ) পয়েন্ট পাওয়া। আমরা জানি, এই কন্ডিশনে বাংলাদেশ দারুণ দল। তাই আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজের কথাই ভাবছি।” 

দুই দলের ক্রিকেটারদের মাঝে সিরিয়াসনেস পুরোটা থাকলেও, খেলার প্রাণ যে দর্শক, তাদের উপস্থিতি নিয়ে থেকে যাচ্ছে শঙ্কা। প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় পর টেস্ট, ম্যাচ শুরুর দু দিন আগেই ছাড়া হয়েছে টিকেট, দামও রাখা হয়েছে হাতের নাগালে। তবু দু দিনে টিকেট কাউন্টারে তেমন দর্শকের আনাগোনা দেখা যায়নি। তাই হয়তো ম্যাচের বড় একটা সময় খালি গ্যালারির সামনেই খেলতে হবে দুই দলকে।

বিশ্বকাপে ভরাডুবি কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানান কারণেই হতে পারে দর্শকদের এই অনীহা। তবে সবকিছু বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ইতিবাচক ফল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতে এর চয়ে বড় প্রত্যাশা আর কী হতে পারে!