জাতীয় নির্বাচন ২০২৪
যশোরের ৬ আসনে নৌকার মাঝি হতে চাইছেন ৬৯ জন
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩, ০২:১১ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনে নৌকার ‘মাঝি’ হতে লড়াইয়ে নেমেছেন ৬৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন তারা।
প্রতিটি আসনে গড়ে ১১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাবেক আমলা, উপজেলা চেয়ারম্যান-মেয়র, বাবা-ছেলেও আছেন। আবার কখনো উপজেলার রাজনীতি করেননি, এমন অনেকেও আছেন এ তালিকায়।
প্রতিটি আসনেই বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন একাধিক শক্তিশালী প্রার্থীও। ফলে বর্তমান সংসদ সদস্য থাকবেন নাকি তাকে হটিয়ে নতুন কেউ মনোনয়ন বাগিয়ে আনবেন, সেই আলোচনা এখন গোটা জেলাজুড়ে। তবে এত বেশি মানুষ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বিভ্রান্ত ও অবাক হয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে শেষ মুহূর্তে দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিজ নিজ প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের ছবি পোস্ট করে মনোনয়নের দাবিকে জোরালো করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বৃহস্পতিবার থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। ওই সভায় বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও শুধু রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এদিন রংপুরের ৩৩ ও রাজশাহীর ৩৯টিসহ মোট ৭২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। শুক্রবার খুলনা বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়।
যশোর-১ (শার্শা)
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যশোর-১ আসনটি ২০০১ সালে হাতছাড়া হলেও পরবর্তীতে শেখ আফিল উদ্দিনের হাত ধরে সেটি পুনরায় উদ্ধার হয়। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিনের আসনে ‘গৃহবিবাদও’ আছে। এরই সূত্র ধরে নির্বাচনী মাঠে এবার তার একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেমেছেন। শেখ আফিলের দুর্গ ভাঙতে চান তারই একসময়ের রাজনৈতিক সহচর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নবী নওয়াজ মো. মুজিবুদ্দৌলা সরদার কনক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাজাহান আলী গোলদার।
এরই মধ্যে প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন কিনে জমাও দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এ আসনে আফিল উদ্দিনের রাজনীতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল আলম লিটন। তবে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেননি লিটন। আফিলের অনুসারীদের ভাষ্য, শিল্পপতি এই রাজনীতিকের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট। টানা তিনবারের এ সংসদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের কারণে এবার দলীয় প্রধান তাকে মনোনয়ন দেবেন। অন্যদিকে লিটনের অনুসারীদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আশরাফুল আলম লিটন রাজনীতির শুরু থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। দলটির শীর্ষ নেতারা যখনই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া আসা করেন তখনই লিটনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
একই সঙ্গে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র থাকাকালে দুটি ইউপি নির্বাচনে চার-পাঁচজন প্রার্থী লিটনের বলয় থেকে মনোনয়ন পান। কোনো কোনো ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে আছেন। এছাড়া মনোনয়ন কেনা বাকি তিনজন মজিবুদ্দৌলা সরদার কনক, নাজমুল হোসেন ও শাহাজাহান আলী গোলদার জোর তদবির চালাচ্ছেন।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা)
আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন। এ আসনের দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরোধ তুঙ্গে। বিরোধের কারণে তাদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সংসদ সদস্যের সঙ্গে নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় দ্বাদশ নির্বাচনে দলের ১৯ নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়েছেন। এরই মধ্যে তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এ আসনের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও সাধারণ মুছা মাহমুদ এবং চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্যের দূরত্ব আছে।
দুই উপজেলার সভাপতি-সম্পাদকের অভিযোগ বর্তমান সংসদ সদস্যের স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করায় উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য দায়িত্ব পালনকাল থেকেই নিয়োগ বাণিজ্যে পুনর্বাসিত করেছেন জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের। দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, নিজের আধিপত্যে বলয় সৃষ্টি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে তাদের এ বিরোধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামাত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দায়িত্বে বসিয়েছেন। তাই দুই উপজেলার শীর্ষ নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যের সঙ্গে রাজনীতি করে না।
তবে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. নাসিরের দাবি, পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে নৌকার পক্ষে সবাই এক।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. নাসির ছাড়াও সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশীষ ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী রায়হান, এ বি এম আহসানুল হক, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিব, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাসসহ ১৯ জন। দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা একজোট হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নাসিরের বিরুদ্ধে।
যশোর-৩ (সদর)
যশোরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। আসনটিতে দলীয় কোন্দল প্রকট। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও কাজী নাবিল আহমেদের মধ্যে শুরু হওয়া কোন্দল আরও প্রকট হয়েছে। যদিও দুই নেতা কোন্দলের বিষয়টি মানতে নারাজ। মনোনয়ন যুদ্ধের যে রাজনীতিতে শাহীন নাবিলের যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, সেই যুদ্ধে এবার অংশ নেননি শাহীন। নিজে মনোনয়ন যুদ্ধে অংশ না নিলেও তারই দীর্ঘদিনের রাজনীতিক সহযোদ্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
এ আসনে নাবিলের মনোনয়ন যুদ্ধে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছেন জেলার সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। এছাড়া কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভক্তি আছে। ফলে তাকে হঠাতে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। আরও দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোবাশ্বের হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর পৌর সভার সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিপু।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর)
অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন যশোর-৪। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত রায়। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের মেয়াদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। বরং নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে দিনকে দিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। নিজের চতুর্থ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েও দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের কোনো শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি। বরং নাশকতা মামলার আসামি ও বিএনপির নেতাদের নিয়ে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহণ করেছেন।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রণজিৎ সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিয়োগ বাণিজ্যে পুনর্বাসিত করেছেন জামায়াত-বিএনপিদের। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজাকারদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীকে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে উপজেলা নেতাকর্মীর মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। ফলে দুই উপজেলা ও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে। দুই উপজেলায় শীর্ষ নেতাকর্মীদের নিয়ে এক মঞ্চে দেখা যায়নি দীর্ঘদিন। সংসদ সদস্যের সঙ্গে নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় নির্বাচনে দলের ১৫ নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
নিজ দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাতে নিজ ঘরেই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন রণজিত। তার মনোনয়ন হঠাতে জোট বেঁধেছেন দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা। এমনকি দলবেঁধে রণজিতের অনিয়ম ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের নানা অভিযোগ লিখিত আকারে দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে। রণজিতের মনোনয়ন হঠাতে নিজ দলে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সরদার অলিয়ার রহমান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী, আওয়ামী লীগ নেতা আরশাদ পারভেজ, সোলায়মান হোসেন বিশ্বাস।
এছাড়া নতুন করে যোগ দিয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) সন্তোষ অধিকারী।
যশোর-৫ (মণিরামপুর)
যশোরের সবচেয়ে বড় উপজেলা মণিরামপুর। বরাবরই এ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে এখন দলীয় কোন্দল এই আসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ এখানে প্রার্থী বদল চান। বর্তমান সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। ২০১৪ সালে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরেরবার (২০১৮) দলের টিকিটে সংসদ সদস্য হয়ে প্রতিমন্ত্রী হন স্বপন ভট্টাচার্য। এরপর থেকে তার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বলায় সৃষ্টি হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহামুদুল হাসান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনীতি করলেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকসহ বড় একটি পক্ষ প্রতিমন্ত্রীর বিপক্ষে। ভবদহ অঞ্চল নিয়ে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দলীয় কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে হলে এবং নির্বাচনে জয় পেতে হলে এবারের নির্বাচনে নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে একাংশের নেতারা মনে করছেন। প্রতিমন্ত্রীর মনোনয়ন হঠাতে এক হয়ে নৌকার মাঝি হতে চেয়েছেন ১৩ জন। প্রতিমন্ত্রী বাদে অন্য ১২ জন হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, আওয়ামী লীগনেতা কামরুল হাসান বারী, আওয়ামী লীগনেতা সুশান্ত কুমার মন্ডল, নিতাই কুমার বৈরাগী, সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ন সুলতান সাদাব।
যশোর-৬ (কেশবপুর)
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর কয়েক মাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় কোন্দল আছে। কেশবপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি এস এম রুহুল আমিন, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামসহ দলের বড় একটি অংশ শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে আছেন। যদিও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফাসহ একটি অংশ শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে নেই।
সংসদ সদস্য বিরোধী নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে কেশবপুরে স্থানীয় বাসিন্দা নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোনো নেতাকে তারা দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। শাহীনের মনোনয়ন ঠেকাতে মাঠে নেমেছে উপজেলার ৯ নেতা। এরই মধ্যে তারা নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুর রফিক, এস এম এবাদত সিদ্দিক বিপুল, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীন সাদেক, আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, তাপস কুমার দাস ও প্রশান্ত বিশ্বাস ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল আজিজ।
এরই মধ্যে শাহীনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে আজিজ জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ঘোষণাও দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং-দ্বন্দ্দ্ব নেই। সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। বড় দল আওয়ামী লীগ। তাই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। অনেকেই সংসদ সদস্য হতে মনোনয়ন দাবি করবেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, সবাই বিভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। আমরা সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসন বিজয়ী করে আবারও শেখ হাসিনাকে উপহার দেবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আমাদের আট উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান আছে। ভেদাভেদ থাকলেও নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে সবাই এক।