ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

রাজশাহীতে সক্ষমতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পেয়েছে ৯২,৪১৯ যুবক-যুব মহিলা

নিউজ ডেক্স

 প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৩, ২০২৪, ১১:১৫ দুপুর  

ছবি সংগৃহিত

 রাজশাহীতে গত প্রায় ১৫ বছরে মোট ৯২,৪১৯ জন যুবক ও যুব মহিলাকে জাতি গঠনের শক্তিতে রূপান্তরিত করার পাশাপাশি তাদের স্বনির্ভর করার জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তাদের জন্য নয়টি আয়বর্ধক ব্যবসা ও পেশার উপর প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যুবকদের মৎস্য, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধ, গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ ও পশুপালনে আর যুবমহিলাদের সেলাই, ব্লক, বুটিক ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের (ডিওয়াইডি) উপ-পরিচালক গোলাম মাহবুব বলেন, নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৭০,৬৪৫ জন পুরুষ ও নারীকে বিভিন্ন ব্যবসা ও পেশার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া ‘কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ’-শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আরও ২১,৭৭৪ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম (এনএসপি)’র আওতায় ৮৫৭ জন যুবক-যুবমহিলা উপকৃত হয়েছে এবং ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জেলার একটি উপজেলায় ১১.৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।গোলাম মাহবুব বলেন, এনএসপি বেকার যুবকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতি গঠন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য একটি অনন্য কর্মসূচি।

তারা এ পর্যন্ত একটি প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া গ্রামীন এলাকা এবং বিশেষ করে চর (নদীবেষ্টিত) এলকার ৪৮০ জন যুবককে মোবাইল ট্রেনিং ভ্যানের মাধ্যমে কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছেন।তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জেলার সাতটি উপজেলার প্রতিটি থেকে ৪০ জন যুবককে-বিশেষ করে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীকে দুই মাসের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসছি।’

‘বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীন যুবকদের জন্য চাকায় চালিত প্রযুক্তির ক্ষমতায়ন কেন্দ্র’- শীর্ষক প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল- যুবক-যুবমহিলাদের নিজ এলাকাতেই আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা।এছাড়া, তারা জেলায় পরিবারভিত্তিক যুব ঋণ কর্মসূচির আওতায় আরও ১২ হাজার ৬০০ যুবককে সম্পৃক্ত করেছেন।আব্দুর রহিম (৩৪) এখন প্রায় ৭৮ লক্ষ টাকার চলতি মূলধনসহ বার্ষিক ৩৮ লাখ টাকার মুনাফা অর্জনের বহুমুখী ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তার এই সাফল্যে এলাকার আরো অনেকেই এখন লাভজনক আয় ও উৎপাদনমূলক উদ্যোগ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছে।

তিনি রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার অন্তর্গত ঝালুকা গ্রামের বাসিন্দা, তিনি ২০১৪ সালে ৬ বিঘা পুকুরে প্রথম মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরের ব্যাপক সাফল্য তাকে মাছ চাষ আরো সম্প্রসারণে উৎসাহ যোগায়।পুকুরটি ইজারা নেয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনী কাজ সম্পন্ন করতে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (ডিওয়াইডি) থেকে ৫০,০০০ টাকা ঋণসহ ৭২,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন।

এর আগে স্থানীয় ডিওয়াইডি মাছ চাষে তাকে এক মাসব্যাপী ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেয়।পর্যায়ক্রমে তিনি পুকুরের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ৭০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছেন।মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি ২০১৬ সালে ১ হাজার লেয়ার মুরগি নিয়ে সীমিত পরিসরে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। তিনি পাঁচটি শেডে প্রায় ৭,০০০ লেয়ার মুরগি পালন করছেন- যার মধ্যে ৯০ শতাংশই ডিম দিচ্ছে।

মঙ্গলবার বাসসের সঙ্গে আলাপকালে রহিম বলেন, ‘দারিদ্র্যের কারণে আমি ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করার পর আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি।শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার দারিদ্রতা দূর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রহিম মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ এবং সবজি ও খেজুর চাষ করছেন। তার অধীনে প্রায় ৪০ জন শ্রমিক নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে কাজ করছেন।রহিমকে অনুসরণ করে ও তার পরামর্শ গ্রহণ করে এলাকার প্রায় ২০ জন যুবক স্বাবলম্বী হয়েছেন।আব্দুর রহিমকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২১ দেওয়া হয়।

শহরের ভাদ্র এলাকার বাসিন্দা নাসিমা খাতুন, ডিওয়াইডি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৫ সালে ছোট আকারে ব্লক এবং বুটিক ব্যবসা শুরু করেন। এখন নাসিমার ব্লক এবং বুটিক হাউসে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের প্রায় ১,০০০ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

তিন কন্যা সন্তানের জননী নাসিমা এখন রাজশাহী শহরের একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, অনেক সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ নারী মহানগরের বুটিক হাউসে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে অনেক অবদান রেখেছেন।রহিম ও নাসিমা ছাড়াও আরও অনেক প্রতিশ্রুতিশীল যুবক-যুব মহিলা ডিওয়াইডি থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা নিয়ে উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত হয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাবান হয়েছেন।

২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন