আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না, তারা আমাদের কাছে আসে
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩, ০৮:২৬ রাত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না, বিদেশিরা আমাদের কাছে আসে। দেখেন, আমেরিকার কত লোক আসছে আমাদের কাছে। রোববার (১৫ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না, বিদেশিরা আমাদের কাছে আসে। তারা (বিদেশিরা) আসে, তারা (বিদেশিরা) অনুরোধ করে। দেখেন, আমেরিকার কত লোক আসছে আমাদের কাছে। আমরা তাদের কাছে যাই না। তারা আমাদের মিশনে এসে দেখা করেছে। আমরা যাই না, আমরা তাদের হাউজে যাই না। তারা এসেছে আমাদের দপ্তরে।
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংলাপের পাশাপাশি দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে মোমেন বলেন, তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। দিস ইজ ওয়েলকাম। সব সময় আমরা সংলাপ করে যাচ্ছি বিভিন্ন দলের সঙ্গে। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। তারাও সংলাপ করুক, তারা যদি চায়। আমরা একটা স্বাধীন কমিশন তৈরি করেছি যেটা তারা বলেছে। সুতরাং এটার সঙ্গে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, আমরা চাই সব লোক ভোট দিক, সবাই অংশগ্রহণ করুক। এটা নতুন কিছু নয়। তারা একটা ফরমায়েশি দিয়েছে, ভালো। মতামত, এটা খুব গুরত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি না। আপনাদের এটা নিয়ে অত হৈচৈ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষক দলের কোনো ভূমিকা নেই। তারপরও দেশটির লোক এসে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের কথা বললে সেটি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নেই। কিন্তু সে দেশগুলো ভালো চলছে। আমেরিকায় কোনো পর্যবেক্ষণ নেই। আর আমেরিকার লোক এসে যদি নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের কথা বলে, এটা দুঃখজনক। তাদের দেশে নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষণ কোনো দিন হয়নি।
বিদেশিদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলা প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের লোকেরা এসে সাক্ষাৎ করছেন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য। সেই ফাঁকে কেউ কেউ নির্বাচনের কথা বলেন। আর এটা আপনাদের হট টপিক। তারা খুব মজা পান, বাংলাদেশের মিডিয়া তাদের পাত্তা দেয়। এজন্য তারা উপভোগ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলে মজা পায়, এটা একটা খেলা। বিদেশিরা এটা নিয়ে খুব মজা পায়। অন্য দেশে কেউ তো পাত্তা দেয় না। আর আপনারাও মজার মধ্যে তাদের উসকানি দেন। এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশকে সরকার স্বাগত জানায় কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আমাদের ইয়েস-নো কিছু বলার নেই। তারা কি বলল, না বলল এটা তাদের মাথাব্যথা।
সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমরা সব সময় বলি, আমরা সবার সঙ্গে আলাপ করতে রাজি আছি এবং করেও থাকি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনে ছোট পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ইউরোপিয়ান কমিশন থেকে সম্প্রতি একটি চিঠি পেয়েছি নির্বাচন পর্যবেক্ষক বিষয়ে। ইউরোপিয়ান কমিশন বলছে, তাদের পয়সার অভাব এবং সেই কারণে তারা বড় প্রতিনিধিদল পাঠাতে পারবে না। তারা বলছে যে, তারা একটি ছোট দল পাঠাবে। যদি ওই ছোট দলের থাকা-খাওয়া এবং আসা-যাওয়ার খরচ আমরা দিই। আমরা এগুলোতে খুব একটা আগ্রহী নই।
নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নয়, ভোটার দরকার জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষকের দরকার নেই। আমাদের দরকার ভোটার। মানুষ ভোট দিলে ওটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিদেশি কে এলো… আমরা বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল নই।
বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে মোমেন বলেন, দ্যাট ইজ ইমমেটেরিয়াল। মানুষ যদি ভোট দেয়, ওটাই আমার জন্য যথেষ্ট। খালি বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকেন কেন (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে উদ্দেশ করে)? এত দেউলিয়া হয়েছেন কেন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমরা দেউলিয়া না।
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না।