ঢাকা, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি যুদ্ধ

‘হামাস’ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৯:২৫ সকাল  

ছবি সংগৃহীত

হামাসকে ধ্বংস করার অভিযানে ফিলিস্তিনের এই গ্রুপটি ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ পৌঁছেছে বলে সতর্ক করার পর মঙ্গলবার গাজায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতারা আশঙ্কা করছেন, অবরুদ্ধ অঞ্চলটি শিগগিরই রোগ ও অনাহারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে এবং তারা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য ইসরায়েলের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছেন।
মঙ্গলবার প্রচন্ড লড়াই শুরু হয়েছে। হামাস বলেছে মধ্য গাজায় সংঘর্ষ হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ভূখন্ডের দক্ষিণে মারাত্মক ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে।সোমবারের হামলাগুলো এখন যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল গাজার দক্ষিণের প্রধান শহর খান ইউনিসকে লক্ষ্য করে। একইসঙ্গে মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে হামলা চালানো হচ্ছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় খুঁজছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোমবার গভীর রাতে বলেছেন, ‘হামাস বিলুপ্তির পথে, আইডিএফ তার শেষ শক্ত ঘাঁটিগুলো দখল করে নিচ্ছে।’হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল হিংসাত্মক হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে এবং এতে কমপক্ষে ১৮,২০০ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।ইসরায়েলের সেনা প্রধান হার্জি হালেভি সোমবার খান ইউনিসের কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তার বাহিনী ‘গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে, উপত্যকার দক্ষিণ অংশে প্রবেশদ্বার এবং মাটির গভীরে টানেল গুলোতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

জাতিসংঘ বলেছে, অঞ্চলটির ২৪ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৯ লক্ষ যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক নারী ও শিশু।
ইসরায়েল পূর্বে গাজার দক্ষিণে বেসামরিকদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজার আহ্বান জানিয়েছিল। সেখানে লোকজনকে যাওয়ার জন্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। এখন ইসরায়েল যুদ্ধ দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানেও ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে ইসরায়েলি সেনারা।

উত্তরের গাজা শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর উম্মে মোহাম্মদ আল-জাবরি রাফাতে বিমান হামলায় সাত শিশুকে হারিয়েছেন।৫৬ বছর বয়সী জাবরি বলেন, ‘গত রাতে আমরা যে বাড়িতে ছিলাম সেখানে তারা বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। সেখানে আমার চার সন্তান মারা যায়। তারা বলেছিল রাফাহ হবে নিরাপদ জায়গা। কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির ভূখন্ডের ধ্বংসের সাথে তুলনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল সোমবার বলেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকরা একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ অনুসারে গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৪টি কোনভাবে চালু আছে। তাও আবার পর্যাপ্ত জরুরী জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অবশিষ্ট হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।  

সোমবার আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্য গাজায় আল-আকসা হাসপাতাল কয়েক ডজন শিশুসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ভিড়ে উপচে পড়েছে।মৌলিক সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়া এবং স্যানিটারি অবস্থার মারাত্বক অবনতি হওয়ায় রাফাহ-তে নারী ও মেয়েরা বলেছে, তারা মাসিকের জন্য কাপড়ের ন্যাকড়া ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে।২৫ বছর বয়সী হালা আতায়া বলেন, ‘আমি আমার বাচ্চার জামাকাপড় বা কোন কাপড়ের টুকরো খুঁজে নিয়েছি।’গাজা শহরের আল-রিমাল আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় আশপাশের বাড়িঘর ও দোকান ধ্বংস হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জাতিসংঘের একটি সংস্থার সদর দফতরে শিবির স্থাপন করে।

এএফপি’র একজন সংবাদদাতা বলেছেন, ইসলামিক এবং সংলগ্ন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।একজন দর্জি রামি আল-দাহদুহ (২৩) বলেন, ‘কোনও পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই, রুটি নেই, বাচ্চাদের জন্য দুধ নেই এবং ডায়াপার নেই, অর্থ্যাৎ এক কথায় বলতে গেলে জীবন বাঁচানোর কোন কিছু নেই’।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে মরিয়া গাজাবাসীদের জন্য সরবরাহ পেতে লড়াই করেছে। এখন শুধুমাত্র মিশরের রাফাহ ক্রসিং খোলা রয়েছে।বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরও কিছু করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হয়ে ইসরায়েল সোমবার ঘোষণা করেছে, এটি গাজাকে দ’ুটি অতিরিক্ত চেকপয়েন্টে সহায়তা স্ক্রিনিং করবে। যা বিধ্বস্ত অঞ্চলে আরও সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে।ইসরায়েল বলেছে, কোনো নতুন সরাসরি ক্রসিং খোলা হবে না। তবে রাফাহ দিয়ে ট্রাক পাঠানোর আগে নিতজানা এবং কেরেম শালোম ক্রসিংগুলো চেক করার জন্য ব্যবহার করা হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মঙ্গলবার গাজায় ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি’ দাবি করে একটি অবাধ্যতামূলক প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির একটি আহ্বান পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যে রাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তারেব বিরুদ্ধে দেশ দু’টি শুক্রবার ভেটো দিয়েছে।
চাপ সুষ্টির জন্য আরব দেশগুলো নিরাপত্তা পরিষদের এক ডজনেরও বেশি রাষ্ট্রদূতের রাফাহ সীমান্ত পরিদর্শনের পর সাধারণ পরিষদের নতুন বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছে।