ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ফিফা ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই

মোরসালিনের দুর্দান্ত গোলে লেবাননকে আটকালো বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩, ০৮:২৭ রাত  

দুর্দান্ত গোলে দলকে সমতায় ফেরানোর পর মোরসালিনের উল্লাস । ছবি : সংগৃহীত

২০২৬ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের দ্বিতীয় ধাপের খেলায় র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা দল লেবাননের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। গোলকিপারের ভুলে দ্বিতীয়ার্ধে এক গোলে পিছিয়ে পড়লেও পরে এই ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা শেখ মোরসালিনের গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। পরে চেষ্টা করেও দুই দল আর কোনো গোল করতে পারেনি।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বসুন্ধরার কিংস অ্যারেনায় শক্তিশালী লেবাননকে রুখে দেওয়ার পরও আক্ষেপ থাকার কথা বাংলাদেশের। শক্তিশালী দলটির বিপক্ষে যথেষ্ঠ সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ তবে বারবার গোলের সুযোগ মিস করায় কাঙ্খিত জয়সূচক গোলের দেখা আর পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথমার্ধ যদিও গোলশূণ্য ড্র হয় তবে সেখানেও বাংলাদেশের আক্ষেপ তাকবে গোল না পাওয়ার।

আর দ্বিতীয়ার্ধে লেবানন এগিয়ে যায় বাংলাদেশের বদলী কিপার মেহেদী হাসান শ্রাবনের ভুলে। তবে শেখ মোরসালিনের অসাধারণ গোলে দ্রুতই ম্যাচ ফেরে স্বাগতিকরা। শেষ দিকে সেই মোরসালিনই গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে জয়ের নায়ক হতে পারেননি। পারেননি ঘরের মাঠে দ্বিতীয়বারের মতো লেবাননকে হারের তেতো স্বাদ দিতে। তারপরও লেবাননের জন্য এই ড্রই হারের সমান। আর বাংলাদেশের জন্য ভীষণ অনুপ্রেরণাদায়ী।

কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের শুরুর দিকে লেবানন প্রাধান্য বিস্তার করলেও সময় যাওয়ার সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বের হয়ে এসে আক্রমণে যায় বাংলাদেশ।
মোরসালিনের দুর্দান্ত গোলে বাংলাদেশের ড্র 

প্রথমার্ধের খেলায় গোলের সুযোগের দিক থেকে এগিয়ে রাখতে হবে স্বাগতিকদেরই। নিষেধাজ্ঞার কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরার পর মঙ্গলবার একাদশে সুযোগ পেয়ে গোলের দুটি সুযোগ নষ্ট করেন তরুণ ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন। নইলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করতে পারতো বাংলাদেশ।

ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে বাংলাদেশ রক্ষণকে ভীষণ চাপে রাখে লেবানন। যদিও তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ, শাকিল হোসেন ও ইসা ফয়সালকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের রক্ষণভাগ দারুণ দৃঢ়তায় সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরী করতে দেয়নি র্যাংকিংয়ে ১০৪তম স্থানে থাকা লেবাননকে। শুরুর চাপ ভালোভাবেই সামাল দিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আক্রমণে যেতে থাকে। বিল্ড-আপ ফুটবল খেলে তারা চেয়েছে বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখতে। যদিও শারীরিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকা লেবানিজদের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে পেরে ওঠা কঠিন ছিলো। তবে কার্ডের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই ম্যাচে ফিরে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা ছিল সোহেল রানার।

লেবাননের গোলমুখে লাল সবুজদের প্রথম আক্রমন হয় ২৪ মিনিটে। জামাল ভুঁইয়ার কর্নারে বিশ্বনাথ ঘোষ সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তার দুর্বল হেডার লেবানিজ কিপার মোস্তফা মাতারের গ্লাভসে সহজেই ধরা পরে। পরের মিনিটেই গোছানো আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ এসেছিল সোহেলের সামনে। তবে বাঁ দিক থেকে মোরসালিনের কাটব্যাক তার কাছে পৌঁছানোর আগেই লেবানিজ ডিফেন্ডার মোহাম্মদ এল হায়েক ব্লক করেন।

৩৩ মিনিটে ডান দিক থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নিচু ক্রস মোরসালিন পা ছোঁয়ানোর আগে বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডার কাসেম আল জেইন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে সেরা সুযোগ নষ্ট করেন মোরসালিন। সোহেল রানার কাছ থেকে পাস পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ফাহিমে মাপা ক্রস ফেলেছিলেন ছোট ডি-বক্সে। তাতে মোরসালিনের ভলি অবিশ্বাস্যভাবে বার উচিয়ে বাইরে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বাংলাদেশ দলের জন্য বড় দুঃসংবাদ হয়ে আসে গোলকিপার মিতুল মারমার চোট। পেশীর টানে উঠে যাওয়ায় তার জায়গায় মাঠে আসেন তরুণ মেহেদী হাসান শ্রাবন। বসুন্ধরা কিংসের এই কিপারকে অবশ্য এসেই দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। লেবানন প্রথমার্ধের মতোই আক্রমনের গতি বাড়ায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। তবে সেভাবে সুবিধে করতে না পারায় অভিজ্ঞ হাসান মাতুক ও আলি নেইচকে তুলে নেন লেবাননের ক্রোয়াট কোচ। মাঠে নামান মাজেদ ওসমান ও মোহামেদ হায়দারকে। ৬৩ মিনিটে মাঠে এসে চার মিনিটের মাথায় লেবাননকে এগিয়ে নেন মাজেদ।

তবে এই গোলে তার যত না কৃতিত্ব তারচেয়ে বেশি ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে শ্রাবনকে। ডান দিক দিয়ে আক্রমনে ওঠা লেবাননের দু'টি প্রচেষ্টা ডিফেন্সে বাধা পেলেও বল ঘোড়াফেরা করছিল ছোট ডি-বক্সে। শ্রাবন এগিয়ে এসে বল আয়ত্বে নিতে চেয়েছিলেন। বিশ্বনাথ চেয়েছিলেন হেড করে ক্লিয়ার করতে, তবে তারা কেউই তাদের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেনি। উল্টো শ্রাবনের বুকে লেগে বল চলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো মাজেদের কাছে। ঠান্ডা মাথায় ফাঁকা পোস্টে বল জমা করেন এই বদলী স্ট্রাইকার। মুহূর্তে নিস্তব্ধতা নেমে আসে কিংস অ্যারেনার গ্যালারিতে।

তবে গ্যালারির লাল-সবুজ সমর্থকদের বেশিক্ষণ নিশ্চুপ থাকতে হয়নি। বরং তাদের চিৎকার কয়েকগুণ বেড়েছে ৭২ মিনিটে শেখ মোরসালিনের অসাধারণ এক গোলে। লেবাননের এক খেলোয়াড়ের ব্যাক পাস আয়ত্বে নিয়ে অনেকটা এগিয়ে নিজের প্রিয় জায়গা থেকে ডানপায়ের আচমকা শট নেন তরুণ ফরোয়ার্ড। যা বাতাসে খানিকটা বাঁক খেয়ে লেবানন কিপারকে বোকা বানিয়ে পৌঁছে যায় দূরের পোস্টে।

অবশ্য ৮৯ মিনিটে সেই মোরসালিনই হতাশায় ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। রফিকুলের কাছ থেকে দারুণ পাস পেয়ে বক্সের বাঁ দিক থেকে তার নেওয়া শট বাইরের জাল কাঁপালে ঘরের মাঠে জয় হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের।