ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩
নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে ভারত
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ১১:৩৩ রাত
ছবি সংগৃহীত
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কচুকাটা করে ব্যাট হাতে রান-উৎসব করেছিল কোহলি-আইয়াররা! তাদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে কিউইদের চারশো ছুই ছুই রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। হ্যাটট্রিক ফাইনালে যেতে হলে এই পাহাড় টপকে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হতো কিউইদের। কিন্তু এক মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে তা করতে পারেনি কেন উইলিয়ামসনের দল। ৭০ রানের জয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে রোহিত শর্মার দল।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে ওঠার মিশনে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানের বিশাল পুঁজি পায় ভারত। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম সেঞ্চুরি হাকানো বিরাট কোহলি ১১৭ ও শ্রেয়াস আইয়ার ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন।
জবাবে ৩৯৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানেই গুঁটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডে। ব্যাট হাতে ড্যারেল মিচেল লড়াকু সেঞ্চুরির পর থামেন ১৩৪ রানে। এছাড়া অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন ৬৯ ও গ্লেন ফিলিপস ৪১ রান করেন। বল হাতে একাই ৭ উইকেট শিকার করে কিউই শিবির তছনছ করে দেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি।
এই জয়ে ২০১১ সালের পর আবার ফাইনালে উঠল দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। অন্যদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা দুটি ফাইনাল খেলে এবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলো কিউইরা। ২০১৯ বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত। একই মঞ্চে এবার কিউইদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল রোহিত শর্মার দল।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে যথার্থও প্রমাণ করেন তিনি। শুভমান গিলকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৮.২ ওভারে ৭১ রান যোগ করেন তিনি। কিন্তু টিম সাউদির বলে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত। ৪টি করে ছক্কা এবং চারে ২৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।
রোহিত ফেরার পরও রানের চাকা সচল রাখেন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। তারা দুজনে ৮৬ বলে ৯৩ রান যোগ করেন। শতরানের পথেই হাঁটছিলেন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান ব্যাটার গিল। কিন্তু পায়ের পেশিতে টান লাগায় তিন অংকের স্কোর ছোঁয়ার আর সুযোগ পাননি তিনি। শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নামলেও ৩টি ছক্কা এবং ৮টি চারে ৬৬ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার।
চোটের জন্য শুভমান না পারলেও কোহলি ঠিক ছুঁয়েছেন তিন অংকের জাদুকরী স্কোর। ১০৬ বলে ৮টি চার এবং ১টি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ওয়ানডেতে মোট সেঞ্চুরিতে তিনি পেছনে ফেললেন কিংবদন্তী টেন্ডুলকারকে। এই সংস্করণে সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি কীর্তিটা শুধু কোহলিরই। শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ৯টি চার এবং ২ ছক্কায় ১১৭ রান করে টিম সাউদির বলে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দী হয়েছেন তিনি।
এর আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে ১২৮ বলে ১৬৩ রানের বড় একটা জুটি গড়ে ভারতকে বড় স্কোর গড়ায় অগ্রনী ভূমিকা রাখেন কোহলি। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা আইয়ারও সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৬৭ বলে। ৮টি ছক্কা এবং ৪টি চারে খেলা তার ৭০ বলে ১০৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস এবং লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯* রানের ক্যামিওতে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩৯৮ রানে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে ৩টি উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি। আয়ারের উইকেটটি নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট।
এরপর রান তাড়ায় দেখেশুনে ব্যাট করে প্রথম পাঁচ ওভারে বিনা উইকেটে ৩০ রান তুলে নিউজিল্যান্ড। তবে বোলিংয়ে এসেই ব্রেক থ্রু এনে দেন মোহাম্মদ শামি। ৯ রানের মধ্যেই ২ উইকেট শিকার করেন ডানহাতি এই পেসার। তবে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামলে জয়ের আশাও হয়তো দেখছিল কিউইরা। তৃতীয় উইকেটে তারা দুজনে ১৮১ রানের জুটি গড়েন।
কিন্তু ৬৯ রান করা উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রেক থ্রু এনে দেন শামি। এরপর একই ওভারে টম লাথামকেও শূন্য হাতে ফেরালে আবার চাপে পড়ে কিউইরা। ২২০ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে একটা হাফসেঞ্চুরির জুটি গড়েন সেঞ্চুরিয়ান মিচেল। ৪১ রান করে বুমরাহর বলে রবীন্দ্র জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিলিপস।
অন্য প্রান্তে তাঁর সাবলিল ব্যাটিং করলেও দলের হার এড়াতে পারেননি মিচেল। বিফলে গেছে তার ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংসটি। শেষদিকে মোহাম্মদ শামির আগ্রাসী বোলিংয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ৩২৭ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আগামীকাল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনালে মাঠে নামবে রোহিত-কোহলিরা।