ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাইডেন-ট্রাম্প সংলাপ প্রসঙ্গে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ০১, ২০২৩, ১১:৩৩ দুপুর  

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার (ফাইল ছবি)

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সেটাই চাই যা বাংলাদেশিরা চায়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া ওয়াশিংটনের এই ব্রিফিংয়ে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সংলাপের প্রসঙ্গও উঠেছে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সকল দলের সাথে সংলাপ ডেকেছে ইসি 

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয়রা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে এবং বর্তমান শাসক শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। আমেরিকা কি জানে, ভারতীয় প্রভাবের কারণে আওয়ামী লীগ ও হাসিনার প্রতি ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে? এমন অবস্থায় বাংলাদেশি জনগণের ভোটাধিকার থাকা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া পুরোপুরি অসম্ভব।

আর আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, হাসিনা শেখ গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু উত্তেজক এবং অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার পরও তিনি একই কাজ করেছিলেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বসে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন—

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার মনে হয়, আমি আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছি। আমি শুধু বলে রাখি যে, আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি, তারা কূটনীতিকদের যথাযথ নিরাপত্তার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এমনটি আমরা সকল দেশের সরকারের কাছেই আশা করি।

আরও পড়ুন:নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে,সংলাপের সম্ভাবনা নাইঃ প্রধানমন্ত্রী 

তিনি আরও বলেন, আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই- যেমনটি আমি আগেই বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব সকলের। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সকল রাজনৈতিক দল, ভোটার, সরকার, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার দায়িত্ব রয়েছে। আর আমরা বাংলাদেশে সেটিই চাই, যা বাংলাদেশের জনগণ চায়। বাংলাদেশে যেন শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।

পরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করেন তবে তিনি বিরোধী দলের সাথে সংলাপ করবেন। মূলত শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনও সংলাপ করতে অস্বীকার করেছেন। তার প্রশাসন বিরোধীদের ওপর খুব আক্রমণ করছে। আজ পুলিশের হাতে বিরোধীদলীয় দুই নেতা নিহত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ঢাকায় বিরোধী দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিনই তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তাহলে আপনি কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে, বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (অংশগ্রহণমূলক) হবে?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের (বাইডেন-ট্রাম্প সংলাপ) উত্তরে আমি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আগে যা বলেছি সেটি ছাড়া অন্য কোনও মন্তব্য করব না। আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা সহিংসতার ঘটনাগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। আমরা সরকারের সাথে, বিরোধীদের সাথে, সুশীল সমাজের সাথে এবং অন্যান্য অংশীদারদের (স্টেকহোল্ডার) সাথে বাংলাদেশের জনগণের সুবিধার জন্য, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাতে যুক্ত আছি এবং আমরা আমাদের এই কাজ চালিয়ে যাব।

পরে আরেক সাংবাদিক বলেন, আমার দুটি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন আছে – বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপি সারাদেশে সড়ক, রেলপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, এতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বানচালের জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে। পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাংচুর করা হয়েছে। এমন অবস্থায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আপনারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবেন?

২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন

জবাবে মিলার বলেন, আমি আগেও বলেছি, ভিসা বা অন্য কোনও নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়ার আগে আমরা সেটি উল্লেখ করি না বা মন্তব্য করি না। তবে আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে সমর্থন করে যাচ্ছি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করা উচিত।