ইংলিশ ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বড় জয়
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩, ১০:০৫ রাত
ম্যাচের প্রথম ভাগে যে উইকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা, সেখানেই ফ্লাড লাইটের আলোয় মুখ থুবড়ে পড়ল ইংল্যান্ডের টপ ও মিডল অর্ডার। লেজের দুই ব্যাটসম্যান আবার দেখালেন, উইকেট ভয়ঙ্কর নয় মোটেও। তাতে ম্যাচের স্থায়িত্ব বাড়লেও বড় হার এড়াতে পারল না ইংলিশরা।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ২২৯ রানে। মুম্বাইয়ে শনিবার ৪০০ রানের লক্ষ্যে নেমে ২২ ওভারে ১৭০ রানেই থমকে যায় ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপে এই প্রথম দুইশর বেশি রানে হারল ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে রানের হিসাবে তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ও এটি। ২০২২ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছিল ২২১ রানে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওভালে ১২২ রানের জয় ছিল আগের সেরা।
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে প্রথম চার ম্যাচের তিনটিই হারল ইংল্যান্ড। সমান ম্যাচে তৃতীয় জয়ের স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রাখেন হাইনরিখ ক্লাসেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে, পায়ে ক্র্যাম্পের ভোগান্তি সয়ে ৬৭ বলে ১০৯ বলের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। ১২ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া ইনিংসে ম্যাচের সেরাও ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
৭৫ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন রিজা হেনড্রিকস। স্রেফ ৪২ বলে অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন মার্কো ইয়ানসেন। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার পরে বল হাতে নেন ২ উইকেট। দুটি করে শিকার ধরেন লুঙ্গি এনগিডিও। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার অবশ্য জেরল্ড কুটসিয়া।
রান তাড়ায় প্রোটিয়া পেসারদের সামনে কখনও দাঁড়াতেই পারেনি ইংল্যান্ড। ৮ উইকেটে ১০০ রানের ধ্বংসস্তূপ থেকে মার্ক উড ও গাস অ্যাটকিনসনের ৩২ বলে ৭০ রানের নবম উইকেট জুটিতে কোনোমতে দেড়শ ছাড়াতে পারে তারা। আর কোনো জুটি ত্রিশ ছুঁতে পারেনি।এই দুজন ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানও ত্রিশ ছুঁতে পারেননি। উড ৫ ছক্কা ও ২ চারে অরপাজিত থাকেন ৪৩ রানে। ২১ বলে ৩৫ রান করেন অ্যাটকিনসন।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এ দিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের প্রথম বলে চার মেরে পরের বলেই আউট হয়ে যান কুইন্টন ডি কক।
সেই ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ১২১ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন হেনড্রিকস ও রাসি ফন ডার ডাসেন। ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি ফন ডাসেন (৬১ বলে ৬০)। শতকের সম্ভাবনা জাগিয়ে রশিদের বলে বোল্ড হয়ে যান হেনড্রিকস।এরপরই উইকেটে যান ক্লাসেন। প্রথমে তিনি ৫৮ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন এইডেন মারক্রামের সঙ্গে (৪২)। ডেভিড মিলার টিকতে পারেননি।
এরপর ক্লাসেন ও ইয়ানসেন ইংলিশ বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দলকে তোলেন রান পাহাড়ে। ৪০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ক্লাসেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকে পা রাখেন ৬১ বলে।
ষষ্ঠ উইকেটে ক্লাসেন ও ইয়ানসেনের জুটিতে আসে ৭৭ বলে ১৫১ রান, যা ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে কিংবা এর নিচে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ জুটি।
ওয়ানডেতে কোনো ম্যাচে নিজেদের সবচেয়ে বেশি রান খরচের পর ইংল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল পাহাড় টপকানোর। সেই অভিযানে পাওয়ার প্লের মধ্যেই চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে দূরে সরে যায় তারা।
শুরুটা জনি বেয়ারস্টোকে দিয়ে। এনগিডিকে ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর জো রুট, দাভিদ মালান, বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা বেন স্টোকস, জস বাটলার, কেউই টিকতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ২৫ বল খেলতে পারেন হ্যারি ব্রুক।
৬৮ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে চোখ রাঙাচ্ছিল আরও বড় পরাজয়। উড ও অ্যাটকিনসনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কিছুটা ভদ্রস্থ হয় তাদের স্কোর। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডারদের দায়ও ছিল অবশ্য, ক্যাচ হাতছাড়া হয় কয়েকটি। বোলিংয়ের সময় আঘাত পাওয়া রিস টপলি ব্যাটিংয়ে নামেননি।
আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ইংল্যান্ডের আরেকটি হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী। পয়েন্ট টেবিলে এখন তাদের অবস্থান ৯ নম্বরে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৯৯/৭ (ডি কক ৪, হেনড্রিকস ৮৫, ফন ডাসেন ৬০, মারক্রাম ৪২, ক্লাসেন ১০৯, মিলার ৫, ইয়ানসেন ৭৫*, কুটসিয়া ৩, মহারাজ ১*; টপলি ৮.৫-০-৮৮-৩, উইলি ৯-১-৬১-০, রুট ৬.১-০-৪৮-০, অ্যাটকিনসন ৯-০-৬০-২, উড ৭-০-৭৬-০, রশিদ ১০-০-৬১-২)
ইংল্যান্ড: ২২ ওভারে ১৭০ (বেয়ারস্টো ১০, মালান ৬, রুট ২, স্টোকস ৫, ব্রুক ১৭, বাটলার ১৫, উইলি ১২, রশিদ ১০, অ্যাটকিনসন ৩৫, উড ৪৩*, টপলি-আহত অনুপস্থিত; এনগিডি ৫-১-২৬-২, ইয়ানসেন ৫-০-৩৫-২, রাবাদা ৬-১-৩৮-১, কুটসিয়া ৪-০-৩৫-৩, মহারাজ ২-০-২৭-১)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: হাইনরিখ ক্লাসেন