মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৩, ০৮:২৪ রাত
ছবি সংগৃহীত
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আজ বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান।মন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময়ে কোন মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গতবছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়কালে ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে।
ফলে গত বছর প্রায় ৮ লক্ষ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদন হয়েছে যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলিশ মাছ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মানে সমৃদ্ধ করা, বড় আকারের ইলিশ উৎপাদন-এর সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাটকা নিধন না করা আর মা ইলিশ সংরক্ষণ।
আরও পড়ুনঃ ১২ অক্টোবর থেকে থেকে ২ নভেম্বর ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
তিনি আরও বলেন, এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরকার আরও বেশি তৎপর রয়েছে যাতে মা ইলিশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
যারা এ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবে, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় এ সহায়তা পৌঁছে গেছে। এর আওতায় মোট ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮শ ৮৭ টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮শ ৭২ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে। যা প্রতিবেশি দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫শ ৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ শ ৩৯ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।