ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এসপি বাবুল-ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ১৩ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ১০:৫০ রাত  

ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে এক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে আদালতে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি সংস্থাটির চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের দাখিল করা প্রতিবেদনে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার ও মেজর সিনহা হত্যায় অভিযুক্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ মোট ১৩ জনের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বিবাদীদের নানাভাবে হয়রানি করার জন্য উল্টো বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন জানিয়েছে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও মামলাটি এর আগে তদন্ত করেছিল মহানগর ডিবি পুলিশ। তারাও ঘটনার সঙ্গে বিবাদীদের কারও সম্পৃক্ততা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। আদালতে বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পিবিআইয়ের হাতে যায়।

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে এস এম জসিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় বাবুল আক্তার ও পরিদর্শক লিয়াকত ছাড়াও সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই সন্তোষ কুমার চাকমা, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার তৎকালীন এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি প্রণব চৌধুরী, সদরঘাট থানার তৎকালীন ওসি মর্জিনা বেগম, কুমিল্লা দাউদকান্দি থানার তৎকালীন এসআই নজরুল ও এসআই হান্নান, ব্যবসায়ী এস এম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমানকে বিবাদী করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাগরিকা এলাকায় ২০১৩ সালে কারখানায় চুরির ঘটনায় মালিক এসএম জসিম উদ্দীন আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিবির তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলী। ২০১৪ সালের ১৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জসিম উদ্দীনকে তার অফিসে ডেকে নেন। এর আগেই মামলা সঠিকভাবে তদন্তের জন্য তার কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার জসিম উদ্দীনকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য চাপ দেন। জসিম উদ্দীন রাজি না হয়ে যখন বের হয়ে আসছিলেন, তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে আটক করে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ খোলার পর দেখেন তিনি পতেঙ্গা থানায় আছেন। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে মারধর করেন। পরে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে দেন জসিম উদ্দীন। টাকা দেওয়ার পরও জসিম উদ্দীনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ভুয়া পরোয়ানার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।

মামলাটি তদন্ত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। তিনি মতামতে উল্লেখ করেছেন, মামলার বাদী জসিম উদ্দিন নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে বিবাদীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ জেলার বিভিন্ন থানা ও আদালতে অব্যাহতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ভুয়া পরোয়ানা সৃজন করে মামলার বিবাদী এস এম সাহাবুদ্দিন বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য, জিয়াউর রহমানসহ বিবাদীদের আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত করছেন বলে দালিলিক ও মৌখিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। এতে আদালত ও পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কর্মশক্তি এবং কর্মঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করে হয়রানি করার জন্য বাদীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে আমি নানা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে মামলার নথিতে যুক্ত করেছি। একইসঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে বিস্তারিত পাঁচ শতাধিক পাতার প্রতিবেদন দাখিল করেছি। মামলা করে বিবাদীদের হয়রানির জন্য বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন জানিয়েছি।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি আগে ডিবি পুলিশ তদন্ত করেছিল। তাদের প্রতিবেদনে অসন্তুষ্ট হওয়ায় নারাজির আবেদন করা হয়েছিল। এরপর মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে যায়। তারা কী প্রতিবেদন দিয়েছেন আমি এখনো দেখিনি।