ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মেয়েকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের, দুর্ঘটনায় সব শেষ

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জানুয়ারী ২২, ২০২৪, ১২:০০ দুপুর  

ছবি সংগৃহীত

গ্র্যাজুয়েশন শেষ। প্রস্তুতি চলছিল চাকরি-বাকরির। কথা ছিল পরিবারের হাল ধরবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জয়নব খাতুন। অভাবের সংসারে আঁধার ঘোচাবেন। প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, তিনি এখন আকাশের তারা হয়ে রইলেন।

গত শনিবার বান্দরবানের রুমায় কেওক্রাডং-দার্জিলিং পাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ি পাহাড়ের ঢালে গভীর খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু ঘটে জয়নবের। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পরিবার ও সহপাঠীদের মাঝে। দুর্ঘটনায় জয়নব ছাড়াও ডা. ফিরোজা নামে আরেক পর্যটক নিহত হন। আহত হন ১০ জন।

আর্থিক সংকটের কারণে কুড়িগ্রামের রৌমারীর অখ্যাত মন্ডলপাড়া গ্রামে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন জয়নব। ঢাকায় কোচিং করছে কয়েকজন সহপাঠীর কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে টিকে যান। তাঁর অদম্য সংগ্রামের গল্প এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের খরচ চালাতে টিউশনি ও নানা সংগঠনে কাজ করতেন জয়নব। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিলেন সরব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিটের সদস্য, হিমু পরিবহনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ভ্রমণকণ্যার সদস্য ছিলেন। সেই সূত্রেই তার বান্দরবানে যাওয়া। নিজের বন্ধুবান্ধব, ছোট-বড় সবার সঙ্গে তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। সবাইকে আপন নিতে পারতেন নিমেষেই। বিপদে-আপদে খোঁজ রাখতেন সবার। সবই এখন ইতিহাস।

জয়নব খাতুনের বাবা আব্দুল জলিল কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় ভাই মেহেদী হাসান বাবু ব্যবসা করতেন, এখন বেকার। বড় বোন জহুরা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা আব্দুল জলিল বলছিলেন, ‘জয়নব পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবে। স্বাবলম্বী করে তুলবে পরিবারকে। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার। সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল’।

রোববার সকালে জয়নবদের বাড়িতে দেখা যায়, মা জুলেখা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জয়নবের মৃতদেহ এক নজর দেখতে প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন। জয়নবের বড় ভাই মেহেদী হাসান বাবু বলেন, ‘সে ছিল আমাদের একমাত্র আশার আলো। তাকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। জয়নব এভাবে চলে যাবে তা কখনও ভাবতে পারিনি।’


প্রতিবেশী আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘অসচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও অত্যন্ত মেধাবী ছিল জয়নব। লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবেন, পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন। তাঁকে নিয়ে আমাদের এই স্বপ্ন ছিল।’

জয়নবের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবরা। দাফন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাকছুদুল মামুন বলেন, কোনো দায়িত্ব দিলে জয়নব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করত।

আজ ঢাবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ও কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিজ গ্রাম মন্ডলপাড়ায় জানাজা হয় জয়নবের। পরে রৌমারী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

ঢাবির অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন শাহিরা আফরিন বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে জয়নবকে আমি চিনতাম। সে মেধাবী হওয়ায় অনেকগুলো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।’