দীর্ঘ ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা বিলি করে চলছে দীপকের সংসার
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৬, ২০২৪, ০৪:০৫ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
"আজকে গরম খবর, জানতে পত্রিকা পড়ুন" এমনিভাবে ডাকতে থাকে পত্রিকার হকার। সকাল থেকে শহরের অলিগলি রাস্তায়, বাসা বাড়ির সামনে, কিংবা হাটবাজারে পত্রিকা ফেরি করে হকারগন। হকারদের সম্পর্কে কেউ তেমন জানতে চান না। জানতে চান না তাদের সুখ-দুঃখের কথা। সমাজের আর দশটা মানুষের মতো তাদেরও আছে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন, আছে জীবনের সুখের চেয়ে দুঃখের অনেক গল্প। কিন্তু তাদের জীবনপাতার গল্পগুলো লিখা হয় জীবন সংগ্রামের কাহিনি দিয়ে। নীরবে নিভৃতে তারা চালিয়ে যায় জীবন সংগ্রাম।
তেমনি একজন হকার দীপক বিশ্বাস (৫৫)। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের চৌধুরী কাছারি গ্রামে। তার বাড়ি থেকে মোরেলগঞ্জ শহর প্রায় ৫-৬ কি.মি. দূরে।
প্রতিদিন সকালে তিনি বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে উপজেলা শহরে এসে পত্রিকা নিয়ে মোরেলঞ্জ শহরের অলিগলি, বাসাবাড়ি কিংবা অফিস-কার্যলয়ে পত্রিকা বিলি করে চলছে এই হকার।
শত শত পত্রিকার পাঠক ও গ্রাহকের পরিচিত নাম হকার দীপক। রাত পোহালেই যার অপেক্ষায় চেয়ে থাকে পাঠক ও গ্রাহকরা। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৪০ বৎসরেরও বেশি সময় ধরে গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে পত্রিকা পৌঁছে দেন হকার দীপক বিশ্বাস। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেক কষ্টে কাটছে তার জীবন। পত্রিকা বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তা ২ ছেলের লেখাপড়া খরচ এবং পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতেই শেষ। তার নিজস্ব স্বাদ আহ্লাদ বলতে কিছুই নেই। পত্রিকা বিক্রি থেকে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন এই হকার দিপক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডি২৪লাইভ.কমের প্রতিবেদককে জানান, আমার বাবা ঋষিকেশ বিশ্বাসের হাত ধরেই এ পেশা বেছে নিয়েছি পত্রিকা বিক্রির। আর কোন কাজও শিখি নাই। প্রতিদিনকার আয় দিয়ে চলে ২ সন্তান, স্ত্রী ও নিজের ভরণপোষণ। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন শ’পাঁচেক পত্রিকা বিক্রি করলেও এখন সে দিন আর নেই। মানুষ প্রিন্ট পত্রিকা বা কাগজে ছাপা পত্রিকা খুব একটা পড়ে না বললেই চলে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আগেই দেশের খবর পেয়ে যায় মানুষ। কিছু পত্রিকা বিক্রি হয়, যারা পুরোনো ক্রেতা আর বয়স্ক মানুষেরা। প্রায় ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি পেশার সাথে জড়িত। আগে ৪/৫ জন হকার থাকলেও, এখন আমি একাই বিক্রি করি। ছাড়তেও পারি না। তবে মালিকের দেনা লাখ টাকার উপরে।কিন্তু এ দেনা কীভাবে পরিশোধ করবো তা জানা নেই।।তবে সম্পত্তি বলতে বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতক বসত ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই।
আমি প্রতিদিন সকালে দেশ ও দশের খবর সবার কাছে পৌঁছে দেই- অথচ আমার খবর নেয়ার কেউ নেই। সংবাদপত্র শিল্প টিকিয়ে রাখতে আমার মতো হকারদের ভূমিকা থাকলেও হকারদের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি। আজ সোমবার সকালে মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন থানা রোডে পত্রিকা বিক্রি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো অকপটে জানালেন দীপক বিশ্বাস।