নির্বাচনে ভয় দেখাতে ভাড়ায় কাজ করতো ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’
প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৪, ২০২৪, ০৯:৫৫ রাত
ছবি সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’। এই গ্রুপের সদস্যরা ভাড়ায় রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ শোডাউন করতো। সেই সঙ্গে জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য পেশিশক্তি প্রদর্শন করতো। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনাও করছিল তারা। মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশি শক্তি প্রদর্শন ও সহিংসতার পরিকল্পনা করছিল সন্ত্রাসী দলটি।
অন্যতম মূল হোতাসহ গ্রুপটির ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই গ্রুপের অন্যতম হোতা টাকলা হায়াতসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিও করতো। তাদের কেউ বাসের হেলপার-ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণশ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি ব্যবসার আড়ালে এই গ্রুপের হয়ে কাজ করতো।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা মো. হায়াত ওরফে টাকলা হায়াত (৪০), মো. সাগর (১৯), মো. ইসমাইল হোসেন (১৯) ও মো. সুমন (৪৫)। তারা ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। এছাড়াও পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার ‘বিরিয়ানি সুমন’ গ্রুপের সদস্যরা হলেন- মূলহোতা মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানি সুমন (২৮), মো. বাদল (২৬), মো. আকাশ (১৯), মো. রাব্বি (২৮) ও মো. রাসেল (৩৮)। র্যাব-২ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার চারজন ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের সদস্য ও পাঁচজন ‘বিরিয়ানি সুমন’ গ্রুপের সদস্য। তাদের দুটি গ্রুপে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন সদস্য রয়েছে। কব্জি টাকা গ্রুপটি আনোয়ার ও টাকলা হায়াতের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এছাড়া তারা ‘আনোয়ার সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘আনোয়ার গ্রুপ’ নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা ২-৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। বিরিয়ানি সুমন গ্রুপটি গ্রেপ্তার সুমন ওরফে বিরিয়ানি সুমনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করছে। এসব সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও দেখা যায়।
গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো জানিয়ে তিনি বলেন, এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতো। এছাড়াও গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। পাশাপাশি মাদক সেবনসহ এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত।