দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে কমলা আবাদে জাহাঙ্গীরের বাজিমাত
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩, ০২:১০ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
জেলার ঘোড়াঘাটে কমলা চাষে সফলতা পেয়ে বাজিমাত করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় বেলে দোআঁশ মাটিতেই তিনি চাষ করেছেন এই কমলা।
এই মাটিতে অনেকে শখের বসে কমলার গাছ রোপণ করে, ফলের সাইজ এবং স্বাদ আশানুরূপ না হওয়ায় একসময় কেটে ফেলেছেন অধিকাংশ মানুষ। আবার এই মাটিতেই এই কমলা চাষে সফলতা অর্জিত হয়েছে। ঘোড়াঘাট উপজেলার নুরজাহানপুর গ্রামে বিস্মিল্লাহ নার্সারির মালিক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে তার নার্সারির পাশে এক একর জমিতে এই কমলার বাগান সৃজন করেছেন। তার বাগানে দার্জিলিং, ম্যান্ডারিন, চায়না, পাকিস্তানি, ছাতকি, নেপালী ও নাগপুরি জাতের কমলার চাষ করা হয়েছে। বাগানটিতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি কমলার গাছ রয়েছে। এসব কমলার অধিকাংশ গাছে প্রথমবার গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত কমলার ফলন হয়েছে। এমন আনানুরুপ কমলার ফলন হওয়ায় সকলের দৃষ্টি পড়েছে। স্থানীয় মাটিতে কমলা চাষে সফলতার কথা শুনে অনেকেই সেখানো আসছেন কমলা স্বাদ গ্রহণ করতে।
সফল এই কমলা চাষি তরুণ উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জেলার ঘোড়াঘাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন নার্সারি ব্যবসায়ী। তিন বছর আগে বাণিজ্যিক চাষের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে তিনি ভারতে ঘুরতে গিয়ে সেখান থেকে দার্জিলিং ও ম্যান্ডারিন জাতের কমলার বেশ কয়েকটি চারা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্যান্য জাতের কমলার চারা সংগ্রহ করেন। চলতি মৌসুমে তার বাগানের সব কয়টি জাতের গাছেই দেখা মিলেছে কমলার। বাগানের গাছে ঝুলে থাকা এসব কমলার সাইজ বাজারে কিনতে পাওয়া কমলার মতই।
বাগান মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে এক একর জমির উপর সাতটি জাতের কমলার পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছিলেন। সব গাছে ফল আসলেও, স্বাদ ও মানের দিক থেকে সফলতা পেয়েছেন দার্জিলিং, ম্যান্ডারিন এবং নাগপুরি জাতের কমলায়। আগামীতে শুধুমাত্র এই তিনটি জাতের কমলা নিয়ে বৃহৎ কমলার বাগান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তার। পাশাপাশি এইসব জাতের কমলার বাণিজ্যিক চারা তৈরি করা হচ্ছে বাগানটিতে। এছাড়াও মূল কমলার বাগান এবং চারা বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে সাতজন কৃষি শ্রমিকের।
সরজমিনে বাগান ঘুরে দেখা যায়, ১০ থেকে ১২ ফিট উচ্চতার বেশ কয়েকটি গাছে থোকায়-থোকায় ঝুলে আছে রঙিন দার্জিলিং ও ম্যান্ডারিন জাতের কমলা। এছাড়াও ১০ থেকে ১৫ ফিট উচ্চতার আরো বেশ কয়েকটি গাছে ঝুলছে পাকিস্তানি ও চায়না জাতের কমলা। তবে এসব কমলা রঙ সবুজ মিশ্রিত। বাগানের অপর প্রান্তে সারিবদ্ধভাবে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের কমলার চারা। এসব চারা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে দেড় শত টাকা মূল্যে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই ৭ জাতের কমলা স্বাদ ও মান নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনটি জাতে সফলতা পেয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল বাজারে কিনতে পাওয়া কমলার চেয়ে আরো উন্নত কমলার চাষ করা। আমার বাগান দেখে অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করছেন কমলার বাগান করতে। আমি তাদেরকে চারা সরবরাহ করছি। পাশাপাশি আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি। স্থানীয় মাটিতে কমলা চাষ করার মধ্য দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানোই আমার উদ্দেশ্য।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান জানান, ‘নিয়ম মেনে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মাটিতেও কমলা চাষে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কমলা চাষি জাহাঙ্গীর আলম তার একটি উদাহরণ মাত্র। আমরা কমলা চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি। পাশাপাশি সব ধরণের সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি।