ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বগুড়ায় মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন সবজি

নিউজ ডেক্স

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৩, ০৮:২১ রাত  

ছবি সংগৃহিত

বগুড়ায় এখন বেশ কুয়াশা পড়ছে। সকালের ঘাসে কিম্বা চাষের জমিতে শিশিরে উপস্থিতি জানান দেয় শীত এসেছে ধীর পায়ে। আর শীতকে সামনে রেখেই চাষিরা শীতকালিন সবজি চাষে মাহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবার আগে আগাম শীত সবজি বাজারে তুলতে ও বেশি আয়ের আশায় একরকম প্রতিযোগিতায় নেমেছে চাষিরা। জেলার বেশিরভাগ মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শীতের নানা সবজিতে। 

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়াকে বলা হয় সবজির জেলা। শীতকালে প্রায় সকল প্রকার সবজির ফলন হয়ে থাকে এ জেলায়। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় শীতকালে ২৮ প্রকার সবজির চাষ হয়ে থাকে বগুড়ায়। আর গ্রীষ্মকালে প্রায় ২০ প্রকার সবজির চাষ হয়। বগুড়ার আবহাওয়ার উত্তপ্ততা বেশ কেটে গেছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শীতকে সামনে রেখে স্থানীয় চাষিরা আগামজাত ও রবি শীত সবজি চাষ করেছেন। আগামজাতের সবজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে চাষিরা এই আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকেন। জেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে।

কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে বগুড়ার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর, কাহালু, গাবতলী উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজি মাঠ। এসবের মধ্যে শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লালশাকসহ হরেক রকমের সবজি। জেলার চাষিরা কেউ নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ তুলছেন ফলন আবার কেউ কেউ বাজারে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমানে শিম, বেগুন, লালশাক, মুলাশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচের ফলন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সবজি চাষে যুক্ত জেলার কৃষকেরা এবার বেশ উৎফুল্ল। প্রাকৃতিক অনুক‚ল পরিবেশের জন্য এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ। 

আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় আমন ধান উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম করার আশাবাদ

শুক্রবার বগুড়া শহরের রাজাবাজার ফতেহ আলী বাজার, কলোনি বাজার ও খান্দার বাজার ঘুরে দেখা যায় আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকা বেগুন ৩০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০  টাকা, পটল ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি  ৪০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৪০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, নতুন পাতা পেঁয়াজ ৮০ টাকা,  পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা,  কাঁচা ১০০ মরিচ ১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা,  শশা ৪০ টাকা, শাক ৩০  থেকে ৪০ টাকা, দেশি পিয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 
কলোনি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করায় দামও কমছে বাজারে। শীত সবজি আসবার আগেও সবজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। এখন সেই সবজি গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় আসছে। আরো দাম কমবে। বাজারে শীতের সবজির যোগান বৃদ্ধি পাচ্ছে আর দাম কমে যাচ্ছে। 

বগুড়ার মাহাস্থান হাটের ইজারাদার পক্ষের কর্মকর্তারা জানান, হাটে প্রতিদিন সবজি কেনাবেচা হয়ে থাকে। ট্রাকে লোড দিয়ে ঢাকায় সবজি যাচ্ছে। বগুড়ার কৃষকরা যেন লাভবান হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সবজি বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত ট্রাকে করে সবজি ঢাকায় যাচ্ছে। এই সবজি চাষ হয়ে থাকে সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর সহ কয়েকটি উপজেলায়। 
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহ নগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতর সদস্য আমজাদ হোসেন জানান, বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ তৈরী করে বৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হয়েছে।  মৌসুম তারা প্রায় ১০ কেটি টাকার চারা বিক্রি করে থাকেন। শীতকালীন সবজি মধ্যে টমেটো, মরিচ, বাঁধাকপি, ফুলকপির বীজ বপন করা হয়। বাঁধা কপির চারা ৮০ পয়সা পিস, ফুলকপি ১ টাকা পিস, বেগুনের একশত চারা ৫০ টাকা, পালং শাকের চারা ২০ টাকা কেজিতে কেনাবেচা হয়। এসব নার্সারী থেকে স্থানীয় অনেক চাষি চারা সংগ্রহ করে সবজির বাগান গড়েন। সেই সবজি বড় হলে স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। 

সবজি চাষী মুকুল হোসেন বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের আগাম সবজি চাষ করে থাকেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবছর ৩বিঘা জমিতে সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। শীতকালিন সবজি অল্প কিছু বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মতলুবর রহমান জানান, এ বছর বগুড়ায় শীতকালিন আগাম সবজি চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যাবে। বগুড়ায় চাষকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। শীত এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে সবজির চাহিদা পূরণে এই আগাম সবজি চাষ ভূমিকা রাখছে। এতে করে বাজারে সবজির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে ঠিকঠাক। আর জেলায় শীতকালিন সবজির চাষ হয়ে থাকে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এ থেকে প্রতি বছর চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। আবহাওয়াগত কারণে বগুড়ায় সবজির ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। এবছরও ভালো সবজি চাষ হয়েছে বগুড়ায়। এ কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।  

২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন