ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সেই শাহজাহান ওমরের পক্ষে থাকবে না রাজাপুর আ. লীগ

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৭:৫০ বিকাল  

ছবি সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের পক্ষে নির্বাচনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ১৮ ডিসেম্বর রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ এক সাধারণ সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যদিও শুরুতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ নেতারা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মুহম্মদ শাহজাহান ওমর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নিয়ে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সব সদস্যের সাক্ষর করা এ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, শাহজাহান ওমর এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি বিএনপির নেতা থাকার সময় যে ভবনে বসতেন, সেটিকে নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে তিনি গণসংযোগ করেছেন।

নির্যাতনের অভিযোগ করে তারা বলেন, বিএনপির নেতা হিসেবে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছেন। তাই দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামানের পক্ষে দলের সবাই কাজ করবেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এ এইচ এম খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, শাহজাহান ওমর নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় এসে দলের সভাপতি-সম্পাদকসহ কোনো নেতাকে ডাকেননি। দলীয় কার্যালয়ে না এসে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করে বিএনপির সমর্থক ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাই সাধারণ সভায় তার পক্ষে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল সমাদ্দার বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে নামতে পারিনি। তিনি এর আগে কাঁঠালিয়ায় এসে সভা করলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেখানে কেউই যায়নি। তাকে সাংগঠনিক ভাবে জানিয়েছিলাম, আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছি। কিন্তু তিনি যদি আমাদের না ডাকেন, তাহলে আমরা কীভাবে তার হয়ে কাজ করবো।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সবাই আমার সঙ্গে আছেন। তারা আমার ঈগল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করতে একমত হয়েছেন। শাহজাহান ওমরের পক্ষে নেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, ৩০নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে তিনি নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত করে চিঠি নিয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র কিনে পূরণ করে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন।

২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে।

২৫ দিন কারাবন্দীর পর বুধবার জামিন পান শাহজাহান ওমর। একই দিন সন্ধ্যার পর কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। পরদিন সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

২০০৩ সালে জোট সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে শাহজাহান ওমর নিজের কিছু জমি ও সড়কের পাশে রাস্তা ও মহাসড়কের কিছু জমির ওপর বিশাল আকৃতির দোতলা ভবন তৈরি করে বিএনপি অফিস নির্মাণ করেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনী সরকারি জমির ওপর তৈরি করা অংশ ভেঙে ফেলতে চাইলেও কোনো শ্রমিক ওমরের ভবন ভাঙার কাজে রাজি হয়নি।