গাইবান্ধার সঙ্গীত ভূবনে উজ্জ্বল নক্ষত্র শিল্পী মিষ্টি রানী
বিডি ট্রিবিউন টোয়েন্টিফোর রিপোর্ট :
প্রকাশিত: জুলাই ০৪, ২০২৫, ০৩:১২ দুপুর

মানব অস্তিত্বের সূচনালগ্ন থেকে ভালবাসার আনন্দ ঘন মহূর্ত,সুখ-দুঃখ,বিরহ ও ক্রোধের বিনয়ের প্রকাশ ঘটে সাহিত্য এবং সংঙ্গীতের মধ্য দিয়ে যা মনের মাধূরি মিশিয়ে পরস্পরের সহায়ক হয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র বর্মনের ঘরে ২০০১ সালের ১১ মার্চ ভোরের লগনে মিষ্টি রানী জন্ম গ্রহন করেন।
নারায়ণ চন্দ্র বর্মনের ঘর আলোকিত হয়ে উঠে মিষ্টি রানীর জন্মের শুভলগ্নের আর্বিভাবের পরশে। নিতান্তই দিন আয়ের দরিদ্র পরিবারে মিষ্টি রানী জন্ম গ্রহন করলেও পিতা-মাতার আদর,ভালবাসা ও মমতার পরিপূর্ণতায় কোন কমতি ছিল না।
পিতা নারায়ণ চন্দ্র বর্মন ও মাতা পুষ্প রানীর সংসারে অভাব অনাটন থাকলেও স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মেয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরনে যাতে কোন প্রতিকুলতা ধেয়ে না আসে সে জন্য দিন মজুরির কাজ করেছেন।
ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েই লক্ষীপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ও সঙ্গীতগুরু স্বপন কুমার সরকারের সানিধ্যে সঙ্গীতে হাতে খড়ি মিষ্টি রানীর এবং সংগীতগুরু স্বপন কুমার সরকারের তালিমে মিষ্টি রানী অতি অল্প সময়েই সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে মঞ্চে গান পরিবেশনের সক্ষমতা অর্জন করেন। সঙ্গীতের সূচনালগ্ন লক্ষীপুরের সুরেলা সঙ্গীত একাডেমীতে এবং পরবর্তীতে রজনীগন্ধা সংগঠনে শিল্পী হিসাবে মিষ্টি রানী দীর্ঘ সময় সঙ্গীতের চর্চা ও মঞ্চে গান পরিবেশনে আলোকিত হয়ে উঠেন। শিল্পী হিসাবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা যারা রেখেছেন তাদের মধ্যে ওস্তাদ স্বপন কুমার সরকার,সঙ্গীতগুরু চুনি ইসলাম, চন্ডীচরণ বর্মন এবং পরিবারের সদস্যরা।
গাইবান্ধার সঙ্গীত ভূবণে শিল্পী হিসাবে সাফল্যের দিকগুলোর মধ্যে অনন্য উৎসাহিত হওয়ার পিছনে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ'র সহযোগিতায় এসকেএস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শেকড়ের সেরা শিল্পী হিসাবে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন,জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সঙ্গীতে প্রথম স্থান অর্জন,এসকেএস ফাউন্ডেশনের রেডিও সারাবেলা'র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উপস্থিতি প্রথম নারী কন্ঠে মিষ্টি রানী রেডিও সারাবেলায় গান পরিবেশন করেন।
অনলাইন প্রতিযোগিতা "প্রিয় কন্ঠ-২০২৩" সেরা শিল্পী হিসাবে ৫ জনের এক জন হিসেবে বিজয়ী হয়েছে। সাম্প্রতিক গত বৃহস্পতিবার থেকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী ভাওয়াইয়া উৎসবের অনুষ্ঠানে গত রবিবার বিকেলে একটি বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করে উপস্থিত সকলের প্রশংসা অর্জন করেছেন।
শিক্ষায় মিষ্টি রানী দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী,লক্ষীপুর হাইস্কুলে মাধ্যমিক, কামারপাড়া মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বোনারপাড়া সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অনার্সে অধ্যয়নরত। শিক্ষা অধ্যয়নের ফাকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই অনুষ্ঠানে গান গেয়ে থাকেন তবে সঙ্গীত জগত থেকে তিনি কখনও সরে যাবেন না সর্বোপরি সঙ্গীত চর্চা নিয়মিত করে যাচ্ছেন।
কামারজানী সাংস্কৃতিক শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) বাবু নির্মলেন্দু মহন্ত বলেন, মিষ্টি রানীর বয়স যখন ৭ বছর তখন থেকে কামারজানীর অনুষ্ঠানে রজনীগন্ধার পক্ষ থেকে গান পরিবেশন করেছে এবং শ্রোতা নন্দিত মিষ্টি রানীর কন্ঠই মিষ্টি তাই শ্রোতারা গানে মুগ্ধ হয়। এ বছরের শুরুতে আমাদের সংগঠনের অনুষ্ঠানে তিন দিন গান পরিবেশন করে হাজারো শ্রোতার প্রশংসা পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি মিষ্টি রানীর প্রতিভা অতি দ্রুতই জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে।
গাইবান্ধার সঙ্গীত জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র শিল্পী মিষ্টি রানী বিডি ট্রিবিউন কে জানান,আমাদের সংসারে নানাবিধ প্রতিকুলতা থাকলেও লেখা-পড়া এবং সংগীত চর্চা নিয়মিত করেছি। বাবা-মেয়ের উৎসাহ প্রদান এবং সঙ্গীতগুরু স্বপন দাদু ও চন্ডীচরন দাদু'র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিল্পী হিসাবে নিজেকে দাড় করিয়েছি। এ ক্ষেত্রে নিজের মনোবল এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খাপখাওয়াতে ঘাত-প্রতিঘাত আসলেও তা প্রভাব ফেলতে পারেনি। সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণা থাকে কিন্তু সব শ্রেনীর মানুষ এমন বৈশিষ্ট্যের নয় তবে নারী শিল্পী হিসাবে দৃষ্টি-ভঙ্গির বিষয়টি গুরুত্ববহ। আমি মনে করি শিক্ষা অধ্যয়ন শেষ করে যদি সরকারি চাকুরির সুযোগ হয় তবে চাকুরির পাশাপাশি সঙ্গীতেও মনোনিবেশ এমনি থাকবে। গান ছাড়তে পারবো না যত প্রতিকুলতাই আসুক তা মোকাবিলা করেই সঙ্গীতের চর্চা নিয়মিত থাকবে।
সংগীত শিল্পী মিষ্টি রানী রংপুর বেতারের নিয়মিত শিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করছেন।