ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

হিমালয় কিংবা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের সমসাময়িক

সুন্দরবন কথন

জলবায়ুবিদ আবদুর রহমান রানা,পরিচালক,সিপিই

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০১:০৩ দুপুর  

সুন্দরবনের বয়স কত? না কোন জিওলজিস্ট কিংবা কোন বন বিশেষজ্ঞের এটা নিয়ে কোন গবেষণার সন্ধান পাচ্ছিনা। আরও একটি মজার বিষয় সুন্দরবনকে বলা হয় স্রোতজ বনভূমি মানে স্রোতে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছপালার বীজ থেকে ধীরে ধীরে সুন্দরবনের মত বিশাল এক বনের সৃষ্টি। 
আসলে কি তাই? কোথাও একটা খটকা লাগে। সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময়তা এই খটকা তৈরী করে। আমি কোন বন বিশেষজ্ঞ নই কিংবা জিওলজিস্টও নই তবে বন এবং ভূতত্ত্ব নিয়ে স্বল্প পড়ালেখার সুবাদে ধীরে ধীরে সুন্দরবন নিয়ে একটি মোহ তৈরী হয়েছে। সুন্দরবনের ইকেলজির দিকে তাকালে দেখা যায় এটি একটি বিশালাকৃতির স্যান্ড ডিউন, কোন সমতল ভূমি নয় যা সাধারণত নদী মোহনায়, সাগরের উপকূলে তৈরী হয়। পুরো বনটির বুক উঁচু এবং চারদিকে বালিয়াড়ির মত নেমে গেছে, আবার কোথাও কোথাও প্রাকৃতিকভাবে কূপ তৈরী হয়েছে ঠিক যেমন বালিয়াড়ির উপত্যকায় তৈরী হয় সল্টফ্যান। এই বালির ঢিবি আর সল্টফ্যান মিলে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য তৈরী করেছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে।
 এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে এত বড় একটি বালিয়াড়ির সারি এবং সল্টফ্যান তৈরী হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেতে হবে প্রথম প্রশ্নে মানে বয়স কত? আবার বয়সের ধারণা পেতে যেতে হবে সুন্দরবন ছাড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে। সুন্দরবন থেকে ঠিক ৩০ কিলোমিটার দূরে দুবলার চর থেকে ঠিক দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান ধরে কিছু খাঁজ নেমে গেছে ১০ মিটার, ২০ মিটার, ৪০ মিটার গভীরতা ধরে একদম ১২০০ মিটার গভীরতা এবং প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম স্থান সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের গভীরতম পয়েন্ট থেকে উপরের দিকে মানে সুন্দরবনের দিকে উঠে আসলে মনে হবে একটি পাহাড়ের চুড়ার দিকে উঠে আসছি? কি কিছু বুঝা যায়? ঐ যে ১২০০ মিটার গভীর থেকে উঠতে উঠতে সেই মহীসোপানের ২০ মিটার ঢাল, ১০ মিটার ঢাল এবং ০ মিটার ঢাল থেকে আরেকটু উপরে উঠে আসলে চুড়ায় দেখা যাবে সুন্দরবন। কেমন অদ্ভূত না? এই অদ্ভূত বিষয়টিই সুন্দরবনের ভূতত্ত্ব। তাহলে বয়স কত? বয়স জানতে এবার খুঁজি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের বয়স কত? হিমালয়ান ভূতত্ত্ব বলছে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হিমালয়ের সাথে তৈরী যখন জিওসিনক্লাইনাল মাউনটেনাস প্রসেসে টেথিস সাগর থেকে হিমালয়ের উৎপত্তি। তাহলে সহজেই বুঝা যায় সুন্দরবন যেহেতু সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের মাথায় পাহাড়ের চুড়ার মত বসে থাকা একটি বালিয়াড়ির উপর সৃষ্টি হওয়া বন সুতরাং এর বয়সও হিমালয় কিংবা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের সমসাময়িক।