ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নতুন শিক্ষাক্রম বিতর্ক: যা জানালেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৩, ১২:০৫ দুপুর  

শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ একটি শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করছেন, কেউ আবার করছেন বিষোদগারও। তবে বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ না, শিক্ষাক্রমের অংশ নয়- এমন কিছু বিষয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েও মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এর জবাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা এনসিটিবি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এ বিষয়ে প্রচারণায় ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত যেসব পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) একটি সংবাদ মাধ্যমের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এসেছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। মানুষ নেতিবাচক আলোচনা বেশি শুনতে চায়। সে কারণেই সরকার সব সমালোচনার জবাব দিলেও ভুল তথ্যগুলোই বেশি প্রচার পেয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনের কথা জানিয়ে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শত বছরের মুখস্থনির্ভর ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে। মুখস্থ নির্ভরতা- এটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলছে, এখনো মানুষ সে চিন্তার মধ্যে রয়েছে। সরকার এটাকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে।

২০২২ সালে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর চলতি বছর সারাদেশে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে এ তালিকায় যুক্ত হবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেয়ার মতো একগুচ্ছ পরিবর্তন এনে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পাল্টে দেয়ার রূপরেখা এসেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর এনসিটিবি সচিব মোসা. নাজমা আখতারের সই করা এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষাক্রমে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে, তা জানালে অবশ্যই বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন-পরিমার্জন করা যাবে। কিন্তু কেউ অপপ্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নবীর ছবি আঁকতে বলা হয়েছে লিখে মিথ্যাচার করছে। হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলে-মেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা- যা পুরোপুরি মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছ, এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ- যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।’

নতুন শিক্ষাক্রমে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে এনসিটিবি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাক প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে বিপন্ন করার প্রচেষ্টা যারা করছেন, তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা যাচ্ছে।’