গাইবান্ধার কামারজানীতে বালু মহাল ঘোষনার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে অনড় অবস্থানে এলাকাবাসী
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে প্রকৃতি মানব অস্তিত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে
গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০১:২৮ দুপুর
কামারজানী মৌজার ঘোষিত বালু মহালের আবাদ ভূমি
গাইবান্ধা সদর উপজেলাধীন কামারজানী ইউনিয়নের জে,এল নং ১২২ কামারজানী মৌজা চাষাবাদ ফসলি আবাদি ভূমি যার নিকটবর্তী ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক বন্দরসহ নদী তীরবর্তী ঘনবসতিপূর্ন এলাকা সত্ত্বেও গত ১২ ডিসেম্বর,২০২৪ খ্রি. তারিখে জেলা প্রশাসক, গাইবান্ধা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বালু মহাল ঘোষনা করা হয়।
বালু মহাল ঘোষনার পর থেকেই এলাকাবাসী প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে।
গতকাল শনিবার চরাঞ্চল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ কামারজানী ঘাটে এলে স্থানীয় চার শতাধিক মানুষ ঘোষিত বালু মহাল বাতিলের দাবি জানান।
স্থানীয়রা বলছেন, বালু মহাল বিগত সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থে কুচক্রী ব্যক্তিরা প্রক্রিয়া চলমান রেখে ছিল যা কোন ভাবেই জনমত যাচাই-বাছাই বা পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব বিবেচনা না করেই বর্ণিত মৌজায় বালু মহাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে উক্ত বালু মহাল কার্যকর হলে ফসলি আবাদ ভূমির ক্ষতিতে কৃষি উৎপাদন ব্যহত, নিকটবর্তী ঐতিহ্যবাহী কামারজানী বন্দর এবং বন্দরের প্রানকেন্দ্রে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ নদী তীরবর্তী ঘনবসতিপূর্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীনের মারাত্মক ঝুঁকিতে উপনীত হয়েছে।
আন্দোলনের সদস্য সচিব মো. মাজু মিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী কামারজানী বন্দরসহ ফসলি ভূমি রক্ষায় বালু মহাল বাতিল করতে হবে। কোন অবস্থাতেই জনগনের ক্ষতি করে বালু মহাল চলতে পারে না।
আন্দোলনের আহবায়ক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বালু মহাল বাস্তবায়ন হলে কামারজানী বন্দর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এবং মানচিত্র থেকে ইউনিয়নটি হারিয়ে যাবে। তাই বালু মহাল বন্ধে দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
কামারজানী ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মো. সোলাইমান ইসলাম মাস্টার বলেন, প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত বালু মহাল বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ঐতিহ্যবাহী কামারজানী বাণিজ্যিক বন্দর তৎসঙ্গে স্কুল, কলেজ, বহুতল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বেসরকারি জন-কেন্দ্রিক সেবা প্রদানকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠক এম সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে গাইবান্ধা সদরের কামারজানী একটি অতিমাত্রায় বন্যা ও দূর্যোগ প্রবন এলাকা। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে প্রকৃতি মানব অস্তিত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধা সদর উপজেলাধীন কামারজানী ইউনিয়নস্থিত মৌজা-কামারজানী জে,এল নং ১২২ চাষাবাদ ও আবাদভূমি, তৎসংলগ্ন সরকারের গুচ্ছগ্রাম-এনজিওর আশ্রায়ন, জনবসতিপূর্ন চরাঞ্চল এবং নদী ভাঙন তীরবর্তী এলাকাসহ নিকটবর্ত্তী বাণিজ্যিক বন্দর থাকা সত্ত্বেও বালি মহাল ঘোষনা করায় তা পরিবেশগত এবং প্রাকৃতিক প্রভাব বিস্তারে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন বলে অনুরোধ করছি।
সর্বোপরি জনস্বার্থে কামারজানী বাণিজ্যিক বন্দরসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারী বেসরকারি স্থাপনাসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও ফসলি জমি রক্ষায় বালু মহালের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত করা প্রয়োজন।
চরাঞ্চল পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ উপস্থিত জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন, এলাকাবাসী যদি বালু মহাল না চায় তবে তা বাতিল করা হবে। এলাকাবাসীর দাবি তিনি মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।