বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমি দানপত্রে অনাগ্রহী বিত্তবানরা
দানপত্র দলিলে মৌজা দরে মূল্য তুলতে হবে,মূল্যের সাড়ে পাঁচ শতাংশ রেজিষ্ট্রেশন ফিস
বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১১:১৮ দুপুর
সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দানপত্র দলিল করতে গিয়ে মৌজা রেটে বাজার মূল্য উঠানো নিয়ে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যার ফলে যে কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে জমি দানপত্রে অনাগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও দাতারা।
সূত্র বলছে,সারাদেশে জমির বাজার দর লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাবরেজিস্টারের আদলে দলিল করতে মৌজা রেট দলিলে তুলতে গিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দানপত্র দলিল নিতে পারছে না। শ্রেনীর উপর মৌজা রেট থাকায় দানপত্র দলিলেও জমির মূল্য তোলা বাধ্যতামূলক বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে একটি দানপত্র দলিলে জমির মূল্য ১০ লাখ টাকা শ্রেনী ভেদে হলে তার জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফিস দিতে হবে। অনেক মৌজায় জমির বাজার দর শতকে ৫০ হাজার টাকা হলে কোন বিত্তবান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দানপত্র করতে আগ্রহ দেখালে সেক্ষেত্রে ২৫ লক্ষ টাকার দানপত্র দলিলেও রেজিষ্ট্রেশন ফিস প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার উপরে দিতে হবে। এসব কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ দানপত্র করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ সম্প্রসারণ বা অবকাঠামো সম্প্রসারণে সামাজিক ভাবে আগ্রহ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার আবশ্যকতা থেকে নতুন স্থাপনকৃত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক একর জমি দানপত্র করতে গেলে সাব-রেজিস্টার অফিসে গিয়ে ওই জমির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা মৌজা রেট তুলতে হবে এবং এই দানপত্র দলিল করতে গেলে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে প্রায় তিন লক্ষ টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফিস জমা দিতে হবে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো নির্মাণে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন অন্য দিকে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দানপত্র দলিল করতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে জেনে হতাশাজনক অবস্থায় পড়েছে উদ্যোক্তারা।
সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ক্রমাগত কমে যাওয়ায় খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে,গ্রামীন জনপদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংকটের কারনে জমি ক্রয় করবার কোন সুযোগ থাকে না। সমাজে এখনও অনেক দানশীল ব্যক্তি রয়েছে যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ সম্প্রসারনে জমি দিতে ইচ্ছুক হলেও সরকারি মৌজায় জমির শ্রেণি রেটের পরিমান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমি দলিল রেজিষ্ট্রেশনের অর্থ যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কল্যানে দানশীল ব্যক্তি দানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও জমি রেজিষ্ট্রেশন ফিস অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় রেজিষ্ট্রেশন করা হয়ে উঠে না। ফলে মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে দানকৃত জমি দাতার মৃত্যুতে ওয়ারিশরা এসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন। এই সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।
আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৬ স্মারক নং-আর-৬/১এম-০৮/২০১৭-১১৮ তারিখ:০৪.০৫.২০১৭ খ্রি: প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে দানপত্র দলিলের নির্ধারিত রেজিষ্ট্রেশন ফিস মওকুফ করা হয় যা দেশের সংস্থা পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক বলে প্রতীয়মান। এমতাবস্থায়-দেশের বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দলিল রেজিষ্ট্রেশন ফিস মওকুফ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন উন্নয়ন সংগঠকরা।
বেসরকারি সামাজিক উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দলিল রেজিষ্ট্রেশন ফিস মওকুফ হলে দেশের গ্রামীন জনপদে অনেক দানশীল ব্যক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ সম্প্রসারনে দান করার অভিপ্রায় দেখাবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জমি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।