ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলের বালুচর আবাদ ভূমিতে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক জীবিকায়ন

কোটি কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন করের সম্ভাবনা

বিশেষ প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৩:৩১ দুপুর  

 
উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদীবেষ্টিত বালুচর আবাদ ভূমিতে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক জীবিকায়নে গতি সঞ্চার করেছে।
 ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে নদীবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলা অতিমাত্রায় বন্যা ও নদী ভাঙন প্রবন। এ জেলার আয়তন ২২৪৫.০৪ বর্গ কিলোমিটার। জেলার সাতটি উপজেলা নদীবেষ্টিত বালুচরের সংখ্যা প্রায় ৪২০টি।
 
 ভারতের আসাম প্রদেশের ধুবড়ী ও মেঘালয়ের তুরার নেমে আসা পানি বাংলাদেশের নদ-নদীতে স্রোতধারায় বহমান। সেই স্রোতধারা নেমে আসা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদী দিয়ে মিলিত হয় ব্রম্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীতে। 
 
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর,ফুলছড়ি ও সাঘাটা চারটি উপজেলা নদী বেষ্টিত হওয়ায় দেড় শতাধিক চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী বন্যা,নদী ভাঙন ও খরার প্রভাবে সরাসরি আক্রান্ত। বন্যা ও নদী ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করে জীবিকায়নের উন্নতিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপখাওয়াতে হয়। 
চরাঞ্চলে বসবারত ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী কৃষি চাষাবাদে ফসল উৎপাদন ও চারণভূমিতে গবাদি পশুপালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছলতা আসলেও তার বেশির ভাগ টাকা ভূমিদস্যুতাদের দিতে হয়। চরের দেওয়ানি নামে পরিচিত এসব ভূমিদস্যু হাজার হাজার বিঘা বালুচর ফসল উৎপাদনে চাষাবাদে লিজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা ভূমিহীনদের কাছ থেকে নিচ্ছেন। 
 
অর্থকরি ফসল হিসাবে ভূট্রা চাষ যেন বদলে দিয়েছে চরাঞ্চলের দূর্দশা। একটি ভূমিহীন পরিবার দু-তিন বিঘা বালুচর দেওয়ানির (ভূমিদস্যু) লিজ নিয়ে সেখানে ফসল উৎপাদনে যে লাভের স্বপ্ন দেখে তার বেশির ভাগে যায় অন্যদের হাতে। 
ভূট্রা,ধান,পাট,চিনা,কাউন,বাদাম,মরিচসহ সব ধরনের চাষাবাদ উপযোগী চরের পলি ভূমি। 
 চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী বালুচরে আবাদ করেই অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে। ভূমিদস্যুতায় জিম্মিতে চর দখল কান্ডে হাজার হাজার একর বালুচর লিজ দিয়ে মোটা অংকের ভূমি বানিজ্য করছে প্রভাবশালীরা। ভূট্রা চাষের জন্য কৃষকরা ১০-১২ হাজার টাকা বিঘা লিজ নিচ্ছেন ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে। অথচ ওই সব সরকারি ভূমি সঠিক ব্যবস্থাপনায় কোটি কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন করের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক সদিচ্ছায় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে চরাঞ্চল নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংগঠকরা। 
সরকারি খাস ভূমি চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মাঝে একসোনা মেয়াদ বা ভূমিহীন বন্দোবস্তসহ রাজস্ব আয় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় ভূমি মন্ত্রনালয়কে গুরুত্ব দেয়া দরকার। 
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল চরের মোছা: মমেনা বেগম বলেন,অন্যের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ১১ হাজার টাকা হিসাবে এক একর ভূমি লিজ নিয়ে গত বছর ভূট্রা চাষ করে ছিলাম। লাভের বেশির ভাগই লিজের টাকা পরিশোধে দিতে হয়।
 
ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর চরের মো. আসলাম হোসেন বলেন, চাষাবাদে দিন দিন অনাগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা,অনেকেই চর থেকে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। নিজস্ব কোন ভূমি না থাকায় দেওয়ানি দরবারিতে চরের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করে তেমন লাভ হয় না। তবে চাষাবাদের পাশাপাশি কেউ গরু-ছাগল পালন করায় অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকারের জমি ভূমিদস্যুদের থেমে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে বেশি উন্নতি সম্ভব নয়।
 
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নদীবেষ্টিত বালুচর চাষাবাদের উপযোগী ভূমি হিসাবেই ব্যবহার হচ্ছে। এসব সরকারি খাস ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।  
 চরাঞ্চলের সরকারি খাস ভূমি উদ্ধারে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।  
 
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু জানান,বালুচর এখন ফসলে সমৃদ্ধ হয়েছে। চরের খাস ভূমি উদ্ধারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। তবে বিগত দু মাসে আমরা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে আশানুরূপ অর্জন হয়েছে।
 
 সেন্টার ফর পিপলস ইনভায়রন সিপিই পরিচালক জলবায়ুবিদ আবদুর রহমান রানা বলেন, সম্ভাবনাময় বালুচর চাষাবাদে কৃষি উৎপাদনে অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এই চরাঞ্চলগুলো সরকারি খাস ভূমি হলেও এক শ্রেনীর ভূমিদস্যুতায় জিম্মি রয়েছে। সেখানে ভূমিহীনরা চাষাবাদ করলে লিজ নিতে হয় ফলে সরকারি এসব খাস জমি ভূমি উন্নয়ন কর বা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। তাই চরাঞ্চলের আবাদ যোগ্য সরকারি ভূমিগুলো একসোনা মেয়াদ বা ভূমিহীন করে রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে চরগুলোর শ্রেণী নদী হওয়ায় সেই সুযোগ ব্যবহার করছে ভূমিদস্যুরা। 
তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবিকায়নের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে যদি চর ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা প্রনয়ন হয়।