চুরি করা ভোটে সরকার গঠনের বিরুদ্ধে কারাবন্দি ইমরানের হুঁশিয়ারি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ১০:৩৫ রাত
ছবি সংগৃহীত
পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় পাকিস্তানের কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটিতে চুরি করা ভোটে সরকার গঠনের দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতি আস্থা রেখে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়ায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি পিটিআইয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যকলাপের এবং ‘‘হয়রানি ও হুমকির মুখে’’ ফরম-৪৫ এর সুরক্ষা নিশ্চিত করায় পোলিং এজেন্টদের প্রশংসা করেছেন।
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তানের জনগণ স্পষ্টভাবে তাদের রায় ঘোষণা করেছেন। আর এ কারণেই পাকিস্তানের নির্বাচনে গণতন্ত্র ও সুবিচারের একান্ত প্রয়োজন। আমি চুরি করা ভোটে সরকার গঠনের দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে সতর্ক করছি। এই ধরনের প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি কেবল নাগরিকদের অসম্মানই করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিকে আরও নিচের দিকে ঠেলে দেবে।
দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পিটিআই কখনই জনগণের ইচ্ছার সাথে আপস করবে না এবং আমি পিপিপি, পিএমএলএন এবং এমকিউএমসহ জনগণের ম্যান্ডেট ছিনতাইকারী যেকোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আমার দলকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছি।
এর আগে, পিটিআইয়ের মুখপাত্র রউফ হাসান জানান, ইমরান খানের নির্দেশে কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সরকার গঠনের জন্য মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিন (এমডব্লিউএম) পার্টির সাথে জোট করবে পিটিআই।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) সাথে সরকার গঠনের সব ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে এমডব্লিউএমের সাথে জোট করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত আসন নিয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে জামায়াত-ই-ইসলামির (জেআই) সঙ্গে পিটিআইকে জোট করতে বলেছেন তিনি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া পিএমএল-এন ৭৯ ও পিপিপি ৫৩ আসনে জয় পেয়েছে। দেশটিতে কোনও দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ব্যাপক রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এর মাঝেই দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে পিএমএল-এন এবং পিপিপির তাদের সংসদীয় অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলে ভেড়ানোর জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মাত্র একটি আসনে জয় পেয়েছে এমডব্লিউএম। এখন এই দলটির সাথে কেন্দ্রে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিটিআই। আর পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে ইমরান খানের দলের সমর্থিত ১১৬ প্রার্থী জয় পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিটিআই-সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থীদের যেকোনও একটি দলে যোগ দিতে হবে। যদি কোনও দলে যোগ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সংরক্ষিত আসনের বরাদ্দ পাবে না পিটিআই-সমর্থিত বিজয়ীরা।
দেশটির সংবিধানে বলা আছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি অথবা নির্বাচনের দিন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে। দেশটির জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে ২৬৬টি আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পরিষদে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি নারীদের এবং ১০টি অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। জাতীয় পরিষদে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান অনুযায়ী এসব আসন বণ্টন করা হয়।