ঢাকা, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি যুদ্ধ

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র চায় ৪১ দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৯:৫৭ রাত  

ছবি সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। ক্রমেই প্রকট হচ্ছে গাজার মানবিক সংকট। পচা লাশের গন্ধ বিরাজ করছে চারদিকে। বেকারি, মসজিদ, হাসপাতাল কিছুই বাদ যাচ্ছে না ইসরায়েলি হামলা থেকে। পরিস্থিতি এমন, সব হাসপাতাল বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর অনুসারে, ইসরায়েল ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ২৫ হাজার টনের বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে, যা দুটি পরমাণু বোমার সমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা লিটল বয় পরমাণু বোমাটি ১৫ হাজার টন উচ্চ বিস্ফোরক উৎপাদন করেছিল এবং এক মাইল (১.৬ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস করেছিল।

গাজায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় বাংলাদেশসহ যেসব দেশ

তবে বিশ্বে অনেক দেশ এমন রয়েছে যারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চায়। এসব দেশের অনেক ফিলিস্তিনকে ভয়াবহ এই দুঃসময়ে সরাসরি সাহায্য করছে। ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক এসব দেশের সঙ্গে।

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র চায় এমন ৪১ দেশের কথা নিচে তুলে ধরা হলো-

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি সমাধানে একমাত্র উত্তর হলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান। চলমান যুদ্ধাবস্থায় যা এ অঞ্চলে একটি নতুন ভবিষ্যতের জন্ম দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাতে যা অনুপ্রাণিত করেছিল সেটা শুধু ঘৃণার কারণে ছিল না বরং তাদের ভয় ছিল, একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্ম হওয়ার, যার সঙ্গে ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সুনাক বলেন, ‘অতীত এসে ভবিষ্যতের জন্মকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

সুনাক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করতে, তার নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করতে এবং জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হতে হবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় এমনো আছে যেগুলো ইসরায়েলকে তার প্রতিক্রিয়ার অংশ বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট বলেছি যে, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। তাদের অবশ্যই হাসপাতালসহ নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে। পশ্চিম তীরে চরমপন্থি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। গাজায় আরও সাহায্য ঢোকার অনুমতি দিতে হবে।’ সুনাক বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আমাকে ফিলিস্তিনি জনগণের ভয়াবহ দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক বেসামরিক লোক তাদের জীবন হারাচ্ছে।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে চিরস্থায়ীভাবে সংঘাত অবসানের একমাত্র উপায় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান। এটাই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে সেই অঞ্চলের ইতিহাস এবং বসবাসকারী লোকজনের হৃদয়কে স্বীকৃতি ও সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা স্থায়ীভাবে শান্তির পথে এগোতে পারি।

ভারত- ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে প্রথমে ভারত যে দুটি বিবৃতি দেয় সেখানে ফিলিস্তিন শব্দটি অনুপস্থিত ছিল। হামাসের হামলার পর নিজের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটে হামাসের হামলার নিন্দা এবং এমন কঠিন মুহূর্তে ইসরায়েলের পাশে থাকার কথা জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে বিস্মিত হয়েছি। নিরীহ নিহত মানুষ ও তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এমন কঠিন মুহূর্তে আমরা ইসরায়েলের পক্ষে আছি।’ মঙ্গলবার টেলিফোনে বেনজামিন নেতানিয়াহুকে মোদি বলেন, ভারত সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে রয়েছে এবং সুদৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ভারত সরকারের ইসরায়েলকে এমন দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কারণে সুধীসমাজ ও বিরোধী দলে সমালোচনার সূত্রপাত ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত তার বক্তব্যে কিছুটা পরিবর্তন আনে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সম্পর্কে ভারত সচেতন উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ভারতের নীতি অনেক পুরোনো। ভারত ইসরায়েলের পাশে রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটি নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি সার্বভৌম, স্বাধীন ও কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে।’

এনডিটিভি আরও জানায়, আরব দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ইরাক থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল আমদানি করে থাকে। এ ছাড়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও তেল কেনাবেচার সম্পর্কে আবদ্ধ ভারত। যদি ভারতের সঙ্গে আরব দেশগুলোর তেল আমদানির সম্পর্কে ভাটা পড়ে তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বাড়বে ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট হবে না।

ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ ভারত। ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম অ-আরব রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে এবং ১৯৮৮ সালে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৬ সালে সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন দুই দেশ দেশের উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। ২০১৭ সালে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস ভারত সফরে আসেন। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সে সফরের জবাবে ফিলিস্তিন ভ্রমণ করেন এবং শান্তিময় পরিবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চীন- ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মূল কারণ ফিলিস্তিনের প্রতি ঐতিহাসিক অবিচার বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফরেন পলিসিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূলে রয়েছে ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্ব। ঐতিহাসিক এ অবিচারের কারণে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগে ফেলা কোনোভাবেই সঠিক ছিল না।

চীনের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় তেলআবিব। বেইজিংয়ে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউভাল ওয়াকস বলেন, তারা চীন থেকে হামাসের এ হামলার বিষয়ে কঠোর নিন্দার আশা করেছিল। কেননা চীনকে নিজেদের বন্ধু হিসেবে দেখে ইসরায়েল।

যুদ্ধ শুরুর পরপরই বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের কথা উঠে আসে। এ সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অবিলম্বে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দুপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় এও বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এ চলমান সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার উপায়।

চীনের এই বক্তব্যে হতবাক ইসরায়েল। তারা ভেবেছিল হামাসের হামলার কঠোর নিন্দা জানাবে চীনারা। বেইজিংয়ে ইসরায়েলি দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইউভাল ওয়াকস বলেছেন, রাস্তায় গরুর মতো মানুষকে জবাই করা হচ্ছে, এখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ডাক দেওয়ার সময় নয়।

ইরান- ইসরায়েলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিবাদন জানায় ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির এক উপদেষ্টা শনিবার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় হামলা করায় অভিবাদন জানান। রাহিম সাফাভি নামের ওই উপদেষ্টা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের স্বাগত জানাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে না, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকতে চাই।

এ ছাড়াও সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও অর্জনকে স্বাগত জানিয়ে শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশাপাশি মাশহাদ, তাব্রিজ ও জাঞ্জান শহরের সড়কে নেমে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন।

এমনকি ইসরায়েলে অকস্মাৎ হামলার পেছনে ইরানের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষে ইরানের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন হামাসের ভয়াবহ হামলার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে ইরান।

রাশিয়া- সংঘাত সমাধানের জন্য ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। গত সোমবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ আহ্বান জানিয়েছেন।

মস্কোতে আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল আহমেদ আবুল ঘেইতের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আলোচনাই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। এর আগে একই দিনে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বর্তমান সংঘাতের পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিস্তৃত হতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যার কারণে এটি আজ আমাদের বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে রাশিয়া। এতে হামাসের বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে পারেনি সংস্থাটি।

তুরস্ক- জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ও ভৌগোলিকভাবে একীভূত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলে যা হয়েছে তারপর আমি বলতে চাই আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে আর সংঘাত বাড়ে। এ দু’পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানাই।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তুরস্ক। এ অঞ্চলে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরদোয়ান বলেছেন, বিশ্ব অব্যাহত সংঘাত ও ট্র্যাজেডি সহ্য না করলেও সাম্প্রতিক ঘটনায় মানবসমাজ ভালো নজির স্থাপন করেনি। ফিলিস্তিন ইস্যু হলো সমগ্র বিশ্ব, বৈশ্বিক শাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মর্যাদার ইস্যু। এই ইস্যুতে বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানের দায় রয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা ফিলিস্তিনি জনগণকে একা ছেড়ে দিয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী যেসব কুশীলব নীরবতার পরিবর্তে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আমরা দুঃখের সঙ্গে তাদের মনোভাবকে স্বাগত জানাই। এই সংঘাতের দুই পক্ষ নিয়ে যেন আমেরিকা, ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের দেশগুলো ন্যায়, ন্যায্য ও মানবিক মনোভাব গ্রহণ করে, আমরা সে আহ্বান জানাই৷ ফিলিস্তিনি জনগণকে শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে মানবিক সহায়তা বন্ধ করার মতো সাম্রাজ্যবাদী সিদ্ধান্ত থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।

সৌদি আরব- ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চলমান যুদ্ধ নিয়ে এবার মুখ খুললেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সালমান চলমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করেছেন। ক্রাউন প্রিন্সের অফিসে থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়- তিনি বলেছেন, সৌদি আরব ‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার অর্জন, সম্মানজনক জীবন লাভের সংগ্রামে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে এবং ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে।’

তবে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। হামাসের হামলার পর প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব। ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে এ সহিংসতার জন্য দেশটিকে দায়ী করেছে সৌদি প্রশাসন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে রিয়াদ।

উত্তর কোরিয়া- হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা আগেই জানিয়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি চীন ও রাশিয়া। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিল পরমাণু শক্তিধর আরেক দেশ উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলছে, গাজায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতের জন্য ইসরায়েল দায়ী। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই দীর্ঘদিনের এই সংঘাত সমাধানের প্রধান পথ।

উত্তরের ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র রোডং সিনমুন বিদেশি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থায় একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ লিখেছেন। রোডং সিনমুন বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অব্যাহত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফলই এই সংঘাত। এ সংঘাত সমাধানের প্রধান উপায় হলো স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলা।

পাকিস্তান-

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি চলমান দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে চলমান দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির সমাধান চায়। পাকিস্তান সবসময় দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ছিল। ১৯৬৭ সালের আগেকার সীমান্ত অনুযায়ী, আল কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে সার্বভৌম স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে দেশটি।
পাকিস্তানের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না গঠন হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না পাকিস্তান। পাকিস্তানি নাগরিকরা ইহুদিবাদী দেশটিতে ভ্রমণ করতে পারেন না। কারণ, পাকিস্তানের পাসপোর্টে লেখা আছে, ইসরায়েল ছাড়া সব বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।

পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি এ কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি সংগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে ইসরায়েলের দানবীয় আগ্রাসনকে সমান করে দেখার প্রচেষ্টা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

কাতার- কাতার ফিলিস্তিনের সমর্থনে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দেশটি।

সংঘাতের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হামাসের হামলার পরপরই এক বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতার জন্য একমাত্র ইসরায়েল দায়ী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল গাজার বেসামরিক বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে এ রকেট হামলাকে ব্যবহার করছে। এ থেকে ইসরায়েলকে থামাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাতার।

সংযুক্ত আরব আমিরাত- স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চাইলেও গাজা ইস্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বের করে দিলেও আবুধাবিতে এখনো ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অবস্থান করছেন। এ ছাড়া যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেয়নি আমিরাত। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে একটি সূত্র।

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) নিজের এক্সে এক পোস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান জানান, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা দরকার। তিনি গাজায় মানবিক কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়ার ওপর জোর দেন।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে আমিরাত। এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে তেলআবিবের সঙ্গে ব্যবসা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সম্পৃক্ততা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছে আবুধাবি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে অন্যান্য আরব দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথও প্রশস্ত করে এই আমিরাত। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দিকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। যদিও গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এই উদ্যোগ থেকে সরে আসে সৌদি সরকার।

মালয়েশিয়া- মালয়েশিয়ায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে অনেক মতবিরোধ থাকলেও নিপীড়িত ফিলিস্তিনির পক্ষে এক হয়ে গেল দুদল। ফিলিস্তিনির অধিকার ও সার্বভৌমত্বের দাবিতে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ ও ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের সমর্থনে মালয়েশিয়ার সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সংসদ সদস্যরা (এমপি) ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

উপপ্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমদ জাহিদ হামিদি গাজা উপত্যকায় চলমান সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে এবং সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে মালয়েশিয়ার অবস্থান তুলে ধরেন।

আহমাদ জাহিদ বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির নিরঙ্কুশ অধিকার, ইসরায়েলের দখলকৃত জমি ফেরত দেওয়ার অধিকার এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা- দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের ‘ন্যায্য সংগ্রামে’ তার দেশের ঐতিহাসিক সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এ সময় তার কাছে ছোট একটি ফিলিস্তিনি পতাকাও ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে আমাদের একাত্মতা ঘোষণা করছি। তিনি ইসরায়েলকে ‘অত্যাচারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের বর্ণবাদ-সদৃশ নীতি হিসাবে বর্ণনা করেছেন তা উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো রাষ্ট্রদূত নেই। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়েও ইসরায়েলের সাথে সব সম্পর্ক এবং বাণিজ্য বয়কট করা উচিত।

লেবানন- ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই শঙ্কা বহু আগ থেকেই করা হচ্ছে। এবার সেই শঙ্কা আরও জেঁকে বসেছে। ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে প্রতিবেশী আরেক মুসলিম দেশ লেবানন।

গেল ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে সংঘাতের দিন থেকে ইসরায়েল সীমান্তে একের পর হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। তাদের এমন আচরণকে দুঃসাহস বলছে তেলআবিব। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো লেবাননকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনিদের হামলায় বিপর্যস্ত ইসরায়েলের ভেতর প্রবেশ করেছে লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর সদস্যরা। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে হিজবুল্লাহর সদস্যরা।

আফগানিস্তান- এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় চলমান ঘটনার প্রতি কড়া নজর রেখেছে ইসলামিক ইমিরট অব আফগানিস্তান। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনাকে অমর্যাদা করেছে, ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি নিপীড়ন চালিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা- ভেনেজুয়েলা সরকার গাজা উপত্যকায় সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটি সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে সহিংসতার অবসানের আহ্বান জানিয়েছে। ভেনেজুয়েলা জাতিসংঘকে গ্যারান্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ২৩৩৪ অনুযায়ী ইসরায়েলের অবৈধ স্থাপনা সরানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দেশটি।

সিরিয়া- ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও হামলার সমালোচনা করে সিরিয়া গত ৭ অক্টোবরের হামলার পেছনে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দলগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যার জন্য উন্মুক্ত অনুমতি দিয়েছে।

ওমান- ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষের সংযমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দেশটি ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ওমান দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সমর্থন চেয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি ন্যায্য এবং স্থায়ী সমাধান খোঁজার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দেশটি।

নরওয়ে -

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ট গাজার সম্পূর্ণ অবরোধকে অগ্রহণযোগ্য বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার আছে তবে তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে।
হুইটফেল্ড একটি বিবৃতিতে বলেন, গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের অবরোধ সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

তিনি আরও বলেন, গাজায় ধ্বংসের মাত্রা বিশাল। বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ইসরায়েল সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করেছে। ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় আশঙ্কা করছি, গাজার বেসামরিক জনগণ আগামী দিনগুলিতে আরও বেশি কষ্টের সম্মুখীন হবে।

মালদ্বীপ- মালদ্বীপ সরকার গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

দেশটির সরকার বলেছে, কেবল ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আসতে পারে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করে একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে এ শান্তি অর্জন করা যেতে পারে।

ইয়েমেন- ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম আরব দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইয়েমেন। তারপর থেকে ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থনে একটি শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছে দেশটি।

মরক্কো- মরক্কো, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং শান্তিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে সংলাপ ও আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে।

কুয়েত- কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজায় উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সহিংসতা বন্ধ করে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। ইসরায়েলের উসকানি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ করেছে দেশটি। কুয়েত সতর্ক করেছে সহিংসতা অব্যাহত থাকলে তা শান্তি প্রচেষ্টা এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সালেম আবদুল্লাহ আল-জাবের আল-সাবাহ জানিয়েছেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের ‍সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হলে ইসরায়েলের সাথে কুয়েতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’ কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুটিই আমাদের প্রধান ইস্যু। এ নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। কুয়েত কখনোই পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি ।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে যুদ্ধ চালিয়েছে তা প্রতিশোধমূলক। প্রতিরক্ষামূলক নয়।’ কুয়েতের শীর্ষ এ কূটনীতিক গাজায় অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আয়ারল্যান্ড- আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার গাজায় ইসরায়েলের বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ এবং জল বন্ধ করার পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন এবং একে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।

ইরাক- ইরাক একইভাবে গাজায় হামলাকে ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতা বলে অভিহিত করেছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইরাকের প্রখ্যাত শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানি ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনগণকে সাহায্য করার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরাকের এ শীর্ষ আলেম সোমবার (৯ অক্টোবর) এক বার্তায় এ আহ্বান জানান। আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানি বলেন, ‘চলমান বাস্তবতায় সব মুসলমানের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণকে সাহায্য করা এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করা।’ ফিলিস্তিনের মুসলিম জনগণের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ইরাকের এ শীর্ষ আলেম বলেন, ‘তাদের চিৎকারে সাড়া দিতে আমরা সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানাই।’

ইন্দোনেশিয়া- ইন্দোনেশিয়া আরও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির যুক্তি, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি অঞ্চল দখল সংঘাতের মূল কারণ।

কিউবা- কিউবা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার নিন্দা করেছে। দেশটি এ সংঘাতকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দীর্ঘস্থায়ী লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করেছে।

কলম্বিয়া- কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের আলোচনার টেবিলে বসার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন। এক্স-এ পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, গাজাতে ওয়ারশ ঘেটোর চেয়েও বেশি ধ্বংস চালানো হয়েছে। নাৎসিরা ইহুদি বন্দি শিবিরে ও সমাজতান্ত্রিক বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় যে বর্বরতা চালিয়েছিল গাজাবাসীর ওপরেও তেমন বর্বরতা চালানো হয়েছে।

ব্রাজিল- ব্রাজিলও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চায়। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো লুইজ ইকার ভিয়েরা সম্প্রতি বলেছেন, এটা হতাশাজনক যে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় বসবাসকারী সব বেসামরিক নাগরিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চলে যেতে বলেছে‘।

বেলিজ- মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতার নিন্দা করেছে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে গণ্য করে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করেছে দেশটি। অবিলম্বে ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দাবি করেছে বেলিজ।

আলজেরিয়া- আলজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। আলজেরিয়া ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানিয়েছে।

আফ্রিকান ইউনিয়ন- আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন মুসা ফাকি মাহামত ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করাকে বর্তমান সংঘাতের প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সামরিক বৈরিতা বন্ধ করতে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার জন্য আবেদন করেছে।

উগান্ডা- উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনি এক্স (আগের টুইটার) এ বলেছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে নতুন করে সহিংসতা দুঃখজনক। কেন দুই পক্ষ দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না?

মন্টিনিগ্রো - ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে মন্টিনিগ্রো। উভয় দেশই ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং উভয়ই অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশ দুটি ২৭ মে ১৯৯২ সালে একে অপরকে স্বীকৃতি দেয়। রাজধানী সারাজেভোতে ফিলিস্তিনের একটি দূতাবাস রয়েছে। ফিলিস্তিনে বসনিয়ার কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই, তবে কায়রোতে তার দূতাবাস ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করে। অতীতে উভয় দেশই অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।

আর্জেন্টিনা- ১৯৮২ সাল থেকে আর্জেন্টিনা এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৬৭ সালের সালে বিদ্যমান সীমানা অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে মুক্ত ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন দেয়।

লিবিয়া- লিবিয়া এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। ত্রিপোলিতে ফিলিস্তিনের একটি দূতাবাস এবং বেনগাজিতে একটি কনস্যুলেট রয়েছে। উভয় দেশই আরব লীগ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য।

তিউনিসিয়া- তিউনিসিয়ার সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। তিউনিসিয়া এবং ফিলিস্তিনের ভেতর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তিউনিসিয়ার সংসদ একটি বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

মিশর- ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য রাফাহ ক্রসিং খুলতে রাজি না হলেও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন, গাজায় উদ্বাস্তু সংকটের একমাত্র সমাধান স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। মিশর এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো এর আগেও বলেছে, যুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তারা গ্রহণ করবে না। কারণ সেটি হবে নিজেদের ভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের সমান।

জর্ডান- ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জর্ডান। একই সঙ্গে আম্মানে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে আর জর্ডানে না ফেরার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান আল-সাফাদি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করলেই রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ পদে ফিরবেন। এরই মধ্যে বিষয়টি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিতে নিজ দেশের মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ- বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা গতকাল (ইসরায়েল কর্তৃক গাজায়) হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ ও শিশুদের হত্যা এবং শিশুদের রক্তমাখা মুখ দেখেছি। আমি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি- যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনোই মানবজাতির জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যায় যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ শিশু। আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। বাংলাদেশ শান্তি চায়।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের পাশে রয়েছে। এত দূর থেকেও ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবছে বাংলাদেশ। চলমান সংকটের শুরুর দিন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের পাশে থাকার কথা বলেছেন। এজন্য কৃতজ্ঞতা।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বিশ্বকে বলতে চাই- আমরা একা নই। ফিলিস্তিনিরা তাদের এ সংগ্রামে একা নয়। ফিলিস্তিনিরা শান্তি, ন্যায় এবং স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই করছে সেখানে আমরা একা নই। ফিলিস্তিনের এ সংগ্রামে শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমরাও সংহতি প্রকাশ করছে।