যেসব কাজ বাকি তার জন্য নৌকায় ভোট চাই: শেখ হাসিনা
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৭:৪৩ বিকাল
ছবি সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাতেই ১৫ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এ সময়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট চেয়েছেন তিনি।
শনিবার কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, “আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে চাইব- নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন, যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি। “আর যে কাজগুলো বাকি তার জন্য আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন? হাত তুলে দেখান।" এদিন বিকালে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আরও পড়ুনঃ ডিসেম্বর থেকেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচলে প্রস্তুত হবে
পরে তিনি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন। এর আগে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি নতুন ট্রেনে চেপে রামুতে যান। সেখান থেকে মাতারবাড়ী আসেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভাস্থলে পৌঁছালে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তিনি জনসভা মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব দেন। জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখন যে বাংলাদেশ-আমরা পরিবর্তন করেছি; আজকে যার বয়স ১৫ বছর সে মনে করবে, এটা তো এমনই ছিল, কিন্তু তা না। “এমনকি ২০-২৫ বছরের যে সন্তান, সে চিন্তা করে দেখুক- বাংলাদেশ এখন কোন জায়গায় আছে? কারণটা হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, তা গড়তে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাবা-মা সব হারিয়েছি। হারাবার কিছু নাই, পাওয়ারও কিছু নাই। একটাই কাজ- বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, উন্নত থাকে। “যেভাবে আমার বাবা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”
কেবল মানুষের কল্যাণ করাই তার কাজ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। “আপনাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।”
আরও পড়ুনঃ রাজনগরে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত
একপর্যায়ে জনসভায় উপস্থিত লোকজন নৌকার পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়ে ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। সেসময় কিছুক্ষণের জন্য বক্তব্য বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও তাদের উল্লাস, ভালোবাসা আর সমর্থন প্রত্যক্ষ করেন।
পরে তিনি বলেন, “আপনারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কষ্ট করে এসেছেন আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলো, আমি খুব আনন্দিত।" তিন দশক আগে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত মাতারবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে যা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সময়ে। ’৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, তাতে পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে কতো মানুষ জীবন হারায়, কতো জীবন নষ্ট হয়। তখন ক্ষমতায় খালেদা জিয়া, তিনি কিন্তু আসেননি।
“এসেছিলাম আমি আর আমার নেতাকর্মীরা। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সেই দিন কেউ আপনাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ কথা চিন্তা করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছি। এসেছি আপনাদের কিছু উপহার দিতে।" কয়েক ঘণ্টা আগে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারে, তারা বস্তি করে থাকতো- তাদের জন্য খুরুশকুলে সকলের জন্য বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।" দ্বীপ এলাকায় সরকার এখন সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশেষ করে দ্বীপ অঞ্চলগুলো অনেকেই ভেবেছিল এখানে কিছুই হবে না। এখন আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত মাতারবাড়ি।"
সাক্ষরতার হার বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিনা বেতনে শিক্ষা ও বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ ভালো থাকে। কৃষক যাতে সহজে চাষাবাদ করতে পারে, সেজন্য সারে ব্যাপক ভর্তুকি, বীজ কেনা সহজীকরণ করেছে সরকার।" রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেটাও আমরা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সেটাও খুব শিগগিরই হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না, যে যা পারেন চাষ করবেন। আমাদের দেশকে আমরাই এগিয়ে নিয়ে যাব।
“আজকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকারভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফ-ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে- আমরা জেলেদের কার্ড দিয়েছি, খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি; যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।" কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে সম্পূর্ণ একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এরইমধ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি, ফুটবল স্টেডিয়ামও করব। প্রতিটি এলাকায় মিনি স্টেডিয়িাম করেছি, যাতে সবাই খেলাধুলা করতে পারে। “লবণ চাষীরা যাতে লবণ চাষ করতে পারেন…যাদের এখান থেকে সরানো হয়েছে, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লবণ উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া এব যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সেই ব্যবস্থা করছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে, এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। খুন-হত্যা-বোমাবাজি-গ্রেনেড হামলা-চোরাকারবারি-অস্ত্র চোরাকারবারি-এইগুলো তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা।" সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশের মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।
“তার (বঙ্গবন্ধু) পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ পারবে না। কারণ তাদের কোনো দেশপ্রেম নাই। মানুষর প্রতিও তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।” বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “কোনো মানুষের ভেতর যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে, তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে না? জীবন্ত মানুষগুলোকে বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা এটাই তাদের কাজ।
“আমরা উন্নয়ন করি, সৃষ্টি করি। ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকত হবে।”