আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক
কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৫-১৭ পুলিশ-আনসার রাখার প্রস্তাব
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ১২:৫৫ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে এবারই প্রথম ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। পাশাপাশি প্রতি ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৫-১৭ জন করে সদস্য মোতায়েনের চিন্তাভাবনা করছে ইসি।
মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতর, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এবং বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য, দুর্গম ও দ্বীপাঞ্চল) অবস্থিত ভোটকেন্দ্রের জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। ভোট গ্রহণের দুদিন আগ থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চার দিন এবং যাতায়াতসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে আরও একদিন- এভাবে পাঁচ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন। আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে ইসি। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
অন্যদিকে বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন নির্বাচনে বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের’ আওতায় সেনা (সশস্ত্র) বাহিনীর সদস্যদের নামাতে চায় কমিশন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় নোডাল পয়েন্টে অবস্থান করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তারা।
আরও পড়ুনঃ আজ বিদেশি কূটনীতিকদের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বৈঠকে আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইসির পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। ওই বৈঠকে নির্বাচন পূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে করণীয় ও কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ কয়েকটি বিষয় আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
এতে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং অন্যান্য দিক পর্যালোচনার পর নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুতের ইঙ্গিত রয়েছে। ওই নিরাপত্তা পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশন ভেটিং করবে। এরপর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র আকারে জারি করবে। এ বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের আইজি ,বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও র্যাবের মহাপরিচালকদের অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি।
বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান বা তাদের প্রতিনিধি অংশ নেওয়ারও কথা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ হলি আর্টিজানে হামলা: হাইকোর্টের রায় আজ
এবারের নির্বাচনে কমবেশি ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ হিসাবে শুধু ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশের অন্তত সাড়ে ছয় লাখ সদস্য প্রয়োজন হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্র ছিল। ওই নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অবস্থিত সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৪-১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫-১৬ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়। মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে অবস্থিত সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স : আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বাইরের এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তাব করেছে। ওই প্রস্তাবে ব্যাটালিয়ন আনসার সহযোগী ফোর্স হিসাবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিমে কাজ করবে। আর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে সহায়তা দেবেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮৯টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন সেনা বাহিনী এবং ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ৯৮৩ প্লাটুন বিজিবি, ৪২ প্লাটুন কোস্টগার্ড ও ৬০০ প্লাটুন র্যাব মোতায়েন করা হয়।
সব মিলিয়ে ৬৫ হাজারের বেশি সেনা, নৌ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এবারের নির্বাচনে এ সংখ্যা কত হবে-তা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ বেড়েছে। রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রধানদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিশন এ বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।
২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগত বা সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবে ইসি। তবে কারও বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয় সে বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। বৈধ অস্ত্রধারীরা নির্বাচনের কয়েক দিন আগ থেকে যেন তা ব্যবহার ও প্রদর্শন না করে সেজন্য নির্দেশনা জারির নির্দেশনা দেওয়া হবে।