রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে রাসোৎসবের শুভারম্ভ
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৮:২৭ রাত
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা শুভারম্ভ হয়েছে। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে আনন্দঘন পরিবেশে হৈ চৈ, উৎসাহ উদ্দীপনায় ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধারলীলাকে ঘিরে এ উৎসব শুরু হয়। ছোট ছেলে-মেয়েরা রাখাল নৃত্য পরিবেশন করছে।
ভক্তবৃন্দ নৃত্য শিল্পীদের বাতাসা নকুলদানা ও টাকা উপহার দেন। উৎসব উপলক্ষে নানা ঐতিহ্যবাহী সাজে মেতেছে মণিপুরীপাড়া। রাতভর বৈষ্ণব সাহিত্যের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার নৃত্যগীতাভিনয় রাসলীলার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। মূল রাসলীলা রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলবে।বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকার্য খচিত রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারীরা ও বাদকরা।পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে তরুণীরা এ রাসলীলায় অংশ নিয়ে থাকে। রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে- সূত্রধারী কর্তৃক রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আহ্বান, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা ও কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ- সম্পুর্ন যুগলরূপ প্রার্থনা এবং আরতি ইত্যাদি।যদিও সেটি একটি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, কিন্তু তার নৃত্যশৈলী বরাবর সর্ব ধর্ম ও জাতের মানুষকে আকর্ষিত করে।
রাশলীলা উৎসবকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ উৎসবে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাশলীলায় অংশগ্রহণে লাখো মানুষের সকল ধর্মের মানুষের সমাগম ঘটে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে বেলা ১টা থেকে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাত ১১টায় জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল আকর্ষণ প্রাণ মহারাসলীলা।
এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮১তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৩৮তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাসোৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় রাতে মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপ প্রাঙ্গণ।
রাসোৎসবকে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবারে মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮১তম মহারাসলী উপলক্ষে বিকাল সাড়ে ৩টায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো.আব্দুস শহীদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা উধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, কমলগঞ্জ পৌরমেয়র মো. জুয়েল আহমেদ প্রমুখ।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী (এনডিসি)। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) সৈয়দ হারুর অর রশীদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, পুলিশ সুপার মনজুর রহমান পিপিএম-বার, কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার জয়নাল আবেদীন।
অন্যদিকে উপজেলার আদমপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মণিপুরী রাসোৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।