২৭ নভেম্বর মণিপুরি মহারাসলীলা, ঝালিয়ে নিতে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০২:১৪ দুপুর
বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় মণিপুরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা আগামী (২৭ নভেম্বর) সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল, শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ ভগবার শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধালীলাকে ঘিরে এ দিন বিপুল উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে এ সম্প্রদায়ের। মন্ডপে মন্ডপে চলছে রং তুলির কাজ। এলাকার হাওয়ায় এখন নীরব আনন্দের সুর বাজছে। রাস আসছে। রাস আসছে। এই দিন দুপুরে উৎসবস্থল উপজেলার মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরি পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে অবিরত। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের অঙ্গ ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এখন চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করার ঝালিয়ে নেওয়ার শেষ পর্যায়ে।
আরও পড়ুনঃ জুড়ীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণের দিগন্ত উন্মোচিত
জানা যায়, এবার মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১ তম রাসলীলা উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজন করছেন মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে ৪১তম রাস উৎসব।
মণিপরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব “রাসলীলা”। রাসোৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে একদিনের আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপ প্রাঙ্গণ উৎসব ঘিরে। রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নিপুণ নকশার কারুকার্য ও আলোকসজ্জা।
আরও পড়ুনঃ জুড়ীতে কমলা বাগানের স্বপ্ন এখন শঙ্কায় পরিণত
এদিকে মণিপুরি রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়াসমূহে চলছে প্রস্তুতি ও উৎসবের ফুরফুরে আমেজ। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানের ও ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন এখানে। রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে অনুষ্ঠান জুড়ে।
কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। পাশাপাশি উৎসবকে সফল করতে বাড়িতে বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়ার চিত্র চলে। একেকটি মন্ডপে একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধি মোতাবেক গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষককে সহযোগিতা করতে একজন সহকারী প্রশিক্ষক আছেন। সে শিল্পীদের ঠিক করেন। এরপর সামাজিক বিধান মতো শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণের বাইরেও কেউ চাইলে রাসনৃত্যে ভাগ নিতে পারেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের ১৬-২২ বছর। শুধু রাঁধার ৫-৬ বছর। মাধবপুরে তিনটি জোড়া মন্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত, গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে ঘাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চড়াবার মুহূর্তগুলো অনুকরণ করে তুলে ধরা হয়। গোষ্ঠলীলাকে ‘রাখালনৃত্য’ বা ‘রাখোয়াল’ বলা হয়ে থাকে। রাসলীলায় অভিনীত হয় ‘গোপীনৃত্য’।
২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারন সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবার মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১তম মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে পরদিন ব্রাহ্মমুহুর্ত পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই রাসোৎসব আনন্দময় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া একইদিন উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।