ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আজ রাত থেকে ইলিশ শিকারে নামবেন বরগুনার জেলেরা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ০২, ২০২৩, ০৬:৪১ বিকাল  

ছবি সংগৃহীত

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নেকরতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর আজ রাত ১২টায় জেলেরা ছুটবেন ইলিশ শিকারে। ইতোমধ্যে তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। 

ইলিশ স¤পদ সংরক্ষণে সরকার আরোপিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বরগুনার জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কড়া নজরদারি ছিলো। সাগরসহ জেলার পায়রা ও বিষখালি নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ মোবাইল টিমের টহল ছিলো লক্ষ্যনীয়। 

সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৩ লাখ মিটার জাল বিনষ্ট করা হয়েছে। ট্রলার জব্দ ও নিলামে বিক্রি হয়েছে ২ টি। জেল-জরিমানা দেয়া হয়েছে ২০ জেলেকে। জেলেদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা সভা হয়েছে শতাধিক। 
মাছ ধরা ট্রলারগুলোর ইলিশ শিকারে সাগরে যাওয়ার উপর কড়া নিয়েধাজ্ঞা ছিল। কোনো ট্রলারই সাগরে যেতে পারেনি। মাছ ধরতে পারেনি নদীগুলোতেও। জেলার ৩৬ হাজার ১৪জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে সরকারিভাবে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। টানা গত কয়েক বছরে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে এ রকম নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বেশ কিছু বছর ধরে নিয়মিতভাবে সাগর ও নদ-নদীতে ব্যাপক পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এ মৌসুমের শুরুটায় অপেক্ষাকৃত কম ইলিশ পেয়েছেন জেলেরা। স্বল্প সময়ের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় মৌসুমের শেষ সময়ে পর্যাপ্ত ইলিশের আমদানি উপকূলের জেলেদের মুখে হাসি ফোঁটাবে বলে মৎস্য বিভাগ ও জেলে-ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। 
স্থানীয় জেলেরা জানান, সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করলে জেলে-ক্রেতা সবারই লাভ।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, আজ রাত থেকে শত-শত জেলে নৌকা ও ট্রলার মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা ও বিরতির কারণে উপকূলে ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়বে।
সিনিয়র মৎস্য কর্তকর্তা হালিমা খাতুন জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারি সহযোগিতা জেলেদের অবৈধ শিকার থেকে বিরত রাখতে পেরেছে। জেলেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। তাই ইলিশের প্রজননের সুযোগ দিয়ে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে সুযোগ পাবেন তারা।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র বাংলাদেশ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে উপকূলের ১৭টি জেলার ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই সব স্থানে ডিম ছাড়তে গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে আসে ‘মা ইলিশ’। ইলিশ অত্যন্ত দ্রুতগামী গভীর সামুদ্রিক মাছ। তারা সবসময় চিরচেনা পথে চলে। একবার যেখানে ডিম পাড়ার জন্য আসে, বার বার সেখানেই ফিরে আসে, এমনকি বাচ্চারাও (জাটকা)। ইলিশের শরীরের লম্বা দাগ আছে যাকে লেটিভাল লাইন বলে। আর কানের কোনে আছে গোলাকার রিংয়ের মতো, যাকে অটভিলিথ বলে। এর মাধ্যমেই ইলিশ তাদের গন্তব্য শনাক্ত করে থাকে। মা ইলিশ ডিম দেয়ার পর জাটকা (বাচ্চা) নদীতে বড় হয়ে দ্রুত ফিরে যায় গভীর সমুদ্রে। ওই জাটকা বড় হয়ে ডিম দেয়ার জন্য লেটিভাল ও অটভিলিথের মাধ্যমে জন্ম হওয়া স্থানেই ফিরে আসে বারবার। 

কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, গত কয়েক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোস্টগার্ড কঠোরতার সঙ্গে জেলেদের ইলিশ শিকারে নিবৃত্ত করছে। এ সময়ে জেলেদের পর্যাপ্ত সরকারিভাবে আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হয়। আমরা বাংলাদেশী জেলেদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকি। কোস্টগার্ড জেলেদের পরীক্ষিত বন্ধু।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ইলিশের প্রজনন বাড়াতে প্রশাসনও ব্যাপক কাজ করেছে। এ সকল কর্মকান্ড দেশের মৎস্যভন্ডার সমৃদ্ধ করতেই পরিচালনা করা হয়।