বান্দরবান সদরের ৩.২ কেজি আফিমসহ মাদক কারবারী চিংহ্লামং মারমা র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০১:৩৪ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশে অপরাধ নির্মূলে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে। ‘‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’’ এই স্লোগান নিয়ে র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জঙ্গী দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জলদস্যু, ডাকাত, চুরি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ও মাদকসহ দেশে বিরাজমান নানাবিধ অপরাধ নির্মূলে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। এ সকল অপরাধ দমনে প্রতিনিয়ত অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনাসহ আন্তরিকতার সহিত নিরলসভাবে কাজ করছে।
সম্প্রতি পার্বত্য জেলাগুলো বিশেষ করে বান্দরবান জেলার দূর্গম পাহাড়ী এলাকাসমূহে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় বৃদ্ধিসহ মাদক কারবারীরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলী পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে চোরাইপথে আফিমসহ অন্যান্য মাদক পাচার করে আসছে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশের যুব সমাজকে রক্ষা ও দেশব্যাপী মাদকদ্রব্যের বিস্তাররোধে ‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ এই স্লোগানে উজ্জ্বীবিত হয়ে র্যাব-১৫, কক্সবাজার কর্তৃক প্রতিনিয়ত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সদর থানাধীন কুহালং কেমলং ছড়া এলাকা থেকে ৩.৪ কেজি এবং গত ১৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সদর থানাধীন পৌরসভার বান্দরবান বাজার এলাকাসহ ঝুমুর মার্কেটস্থ পূর্ব পশ্চিমে লম্বা হোটেল অথিতি থেকে ৩.৮ কেজি আফিম উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আফিম দূর্লভ ও দামী মাদক, যা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ও উচ্চ বিলাসী মাদক সেবীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশেষ করে দেশের যুব সমাজসহ নাগরিকদের এই ভয়াল মাদকের থাবা থেকে মুক্ত রাখতে র্যাবের প্রাণান্ত প্রয়াস।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রে র্যাব জানতে পারে, আফিমের একটি বড় চালানসহ কতিপয় মাদক কারবারী বান্দরবানের বারমাইল হতে বাসযোগে বান্দরবান শহরের দিকে আসছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বিকেলে র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বান্দরবান জেলার সদর থানাধীন সদর ইউনিয়নের রুমা স্টেশন সংলগ্ন হাফেজ ঘোনা এলাকায় রাস্তার উপর অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশী অভিযান শুরু করে। এ সময় থানচি থেকে বান্দরবানগামী সুগন্ধা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস (যাহার রেজিঃ নং-চট্ট মেট্রো-ব-০৫-০১৬৫) থামানোর জন্য র্যাবের আভিযানিক দল সংকেত দিলে র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে একজন ব্যক্তি হাতে পলিব্যাগসহ সন্দেহজনকভাবে দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত ব্যক্তির দেহ ও সাথে থাকা পলিব্যাগ তল্লাশী করে তার হেফাজত হতে সর্বমোট ০৩ কেজি ২০০ গ্রাম আফিম উদ্ধার করা হয়। কথিত আছে উদ্ধারকৃত অবৈধ আফিম এর আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন কোটি দুই লক্ষ টাকা।
গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারীর বিস্তারিত পরিচয় চিংহ্লামং মারমা (৬০), পিতা-আপ্রুমং মারমা, সাং-মিনিঝিড়িপাড়া, থানা-রুমা, জেলা-বান্দরবান বলে জানা যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মাদক চোরকারবারীসহ দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আফিমের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে মাদক কারবারীরা। এই সিন্ডিকেটটি মূলত বান্দরবান কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র এবং বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে তাদের এজেন্ট রয়েছে। তারা দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য কথিত আফিম উৎপাদন’সহ প্রক্রিয়াজাত করে পাইকারী মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করে আসছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত চিংহ্লামং মারমা একজন চিহ্নিত মাদক কারবারী এবং কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সে পার্বত্য বান্দরবান কেন্দ্রিক আফিম ক্রয়-বিক্রয় এবং দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে বান্দরবানের পাহাড়ী মাদক সিন্ডিকেটের সাথে সার্বিক সমন্বয় করে দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল এবং ক্ষেত্র বিশেষ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আফিম নিয়ে আসতো। অতঃপর অবৈধ পথে পাচারকৃত মাদক নিজের হেফাজতে মজুদ’সহ দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখত। পরবর্তীতে আফিমসহ অন্যান্য মাদকের চালান ভাগ ভাগ করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে পর্যায়ক্রমে বান্দরবানসহ পাশ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এবং চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্ধারিত মাদক কারবারী এজেন্টদের নিকট পাচার করে থাকে। এক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত চোরাকারবারী প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন কৌশলী পন্থায় শরীরের মধ্যে মাদক বেধে, গাড়িতে সেট করে, ব্যাগের ভিতরে সু-কৌশলে লুকায়িত করে এবং যাত্রী সেজে শহরমুখী বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে এসকল মাদক বহন করতঃ পাচার করতো বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারী আফিমের উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়গুলো অপ্রকাশিত থাকছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।