ছাত্রজীবনে বিনা টিকেটে ট্রেনভ্রমণের টাকা পরিশোধ করলেন প্রবাসী
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩, ০৮:১৪ রাত
সংগৃহীত ছবি
ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে বহুবার বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন মো. আবদুল কাইয়ুম মিয়া। ওই সময় পকেটে টাকা না থাকা এবং সচেতনতার অভাবে এমনটা করেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফিরে সেই টাকা পরিশোধ করলেন কাইয়ুম।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে হিসেব করে ট্রেনভ্রমণবাবদ ১ হাজার ৫ টাকা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। ভাড়া পরিশোধের ব্যতিক্রমী এ ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে টিকেট কেটে ট্রেনে ভ্রমণের প্রতি সচেতনতা বাড়বে বলে আশা করছেন।
আবদুল কাইয়ুম মিয়া (৪৪) নরসিংদীর শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের কুমরাদি এলাকার আবদুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসজীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, আবদুল কাইয়ুম মিয়া কতবার বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। তাই অনুমান করে এই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবহার না করার শর্তে ১৫ টাকা মূল্যের ৬৭টি আজকের দিনের টিকেট দেওয়া হয়েছে তাকে। এর দাম আসে ১ হাজার ৫ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করে দায়মুক্তি নিয়েছেন তিনি। টিকেট কেটে পরিশোধ করা এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাইদুল ইসলাম, প্রধান বুকিং সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ মো. মুরশিদ মোল্লা প্রমুখ।
আবদুল কাইয়ুম বলেন, ২০ বছর আগে আমি নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র ছিলাম। ওই সময় বহুবার এমন হয়েছে, আনন্দের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে চড়ে বসতাম। বেশিরভাগই আমরা রাজধানী ঢাকায় চলে যেতাম, ঘুরেফিরে ফিরতি ট্রেনে আবার চলে আসতাম। ছাত্র হওয়ায় ওই সময়ে আমরা কেউই ট্রেনের টিকেট কাটার কথা ভাবতামই না। তবে সম্প্রতি ওই সময়কার বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণের স্মৃতি আমার মনে অনুশোচনা তৈরি করছিল। গত দেড়বছর আগে একবার চেষ্টা করেছিলাম, সম্ভব হয়নি। এবার দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত নিই, যেভাবেই হোক স্টেশনে গিয়ে পূর্বের বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণের ভাড়া আমাকে পরিশোধ করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর জর্ডান থেকে দেশে ফিরে স্ত্রীকে বিষয়টি বললে তিনিও উৎসাহ দেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে চার বছর বয়সী ছেলে আবু সাইদকে নিয়ে শিবপুর থেকে নরসিংদী রেলস্টেশনে আসি। পুরো বিষয়টি জানিয়ে জিআরপি পুলিশের সহায়তা চাই। তারা স্টেশন মাস্টারের কক্ষে নিয়ে ১ হাজার ৫ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে দেয়। এখন অনুশোচনা থেকে মুক্তি পেয়েছি, শান্তি লাগছে।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাইদুল ইসলাম বলেন, আবদুল কাইয়ুম মিয়া সচেতনতার পরিচয় দিলেন। তাকে টিকেটগুলো ছিঁড়ে ফেলতে বলেছি আমরা। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তার এই উদ্যোগ বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণে অন্যদের নিরুৎসাহিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।