স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ঘাতক স্বামী মোঃ এনামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩, ০৮:২৪ রাত
ছবি সংগৃহীত
নিহত ভিকটিম নূর জাহান মনি (২১) এর সাথে গত ০৪ বছর আগে মোঃ এনাম (৩০) এর সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে সামাজিকভাবে বিবাহ হয় এবং তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিবাহের কিছুদিন পরে নূর জাহান সামান্য অসুস্থ হওয়ায় ভিকটিমের স্বামী এনাম বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। মোঃ এনাম দ্বিতীয় বিবাহ করবে মর্মে তার স্ত্রী’কে বিবাহের পাত্রী দেখার জন্য চাপ দিলে ভিকটিম তার স্বামী’র দ্বিতীয় বিবাহে রাজি না হওয়ায় তাকে প্রায়শই মারপিট করত। ভিকটিমকে মারধর ও পারিবারিক কলহ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার সালিশ করলেও ভিকটিমের স্বামী মোঃ এনামের কোনরুপ পরিবর্তন হয়নি। উল্টো ভিকটিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন দিন দিন বাড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের স্বামী মোঃ এনাম গত ০২ বছর পূর্বে ওমানে চলে যায়। মোঃ এনাম ওমানে চলে যাওয়ার পর স্ত্রীকে কোন রকম ভরণ পোষণ না দেয়ায় এবং পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভিকটিম তার বাবা’র বাড়িতে চলে যায় এবং গত ২ বছর সেখানে অবস্থান করে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ এনাম ওমান থেকে তার বাড়ীতে চলে আসলে পরদিন ভিকটিম তার মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে চলে আসে। ভিকটিম তার স্বামীর বাড়ীতে আসলে তার স্বামী তাকে পুনরায় নির্যাতন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ এনাম ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন করলে ভিকটিম জখমপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে স্বামীর বাড়ীতে ফিরে আসে।
গত ০১ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখ দুপুর আনুমানিক ১৪০০ ঘটিকায় ভিকটিমের দেবর মোঃ ইকরাম ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে জানায় যে, "তার মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে যেন তাড়াতাড়ি তাদের বাড়ীতে আসে।" উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর ভিকটিমের পিতা-মাতা কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনসহ দ্রæত ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ীতে এসে ভিকটিমের মৃতদেহ বসতঘরের ভিতরের ফ্লোরে শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা স্থানীয় লোকজনের নিকট হতে জানতে পারে, সকাল আনুমানিক ০৯৩০ ঘটিকা হতে ১১০০ ঘটিকা পর্যন্ত তাদের গুদাম ঘরের ভিতরে ভিকটিম এবং তার স্বামী মোঃ এনামের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং এসময় ভিকটিমের আত্মচিৎকার শুনতে পায়। কিছুক্ষণ পর এনামকে একটি বস্তা কাঁধে নিয়ে উক্ত গুদাম ঘর হতে বের হয়ে যেতে দেখতে পায়। এর কিছুক্ষণ পর ভিকটিমের শ্বাশুড়ী ভিকটিমের ঘরে গিয়ে ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি আশেপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে ভিকটিমের মাথায় পানি ঢালে। পানি ঢাললেও কোন অবস্থাতেই ভিকটিমের জ্ঞান না ফেরায় প্রতিবেশীরা বুঝতে পারে যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে। উক্ত ঘটনাটি ভিকটিমের বাবা স্থানীয় মেম্বার/চেয়ারম্যান'কে অবহিত করে যে, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার মৃতদেহ তার শয়ন কক্ষে খাটের উপর রেখে স্বামী এনাম ঘর হতে পালিয়ে যায়। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত ভিকটিমের লাশের রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
মৃতদেহের ময়না তদন্ত এবং পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রমানিত হয় যে, ভিকটিমকে তার স্বামী এনাম পাশবিক নির্যাতন করতঃ শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় ঘাতক স্বামী এনাম’কে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ০১, তারিখ ০২ অক্টোবর ২০২৩, ধারা-৩০২, দন্ডবিধি ১৮৬০। উক্ত পাশবিক নির্যাতন পূর্বক শ্বাসরোধ করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা রুজু হওয়ার পর একমাত্র পলাতক আসামি এনামকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উক্ত মামলার পলাতক আসামি মোঃ এনাম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত ০৯ অক্টোবর ২০২৩ইং তারিখ আনুমানিক সন্ধ্যা ১৮০০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ এনাম (৩০), পিতা-জাবেদ আলী, সাং-পূর্বটিলা জানিপাথর, থানা-রাউজান, জেলা- চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামি তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করে।
আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ওমানে থাকাবস্থায় ১০-১৫ জন অবিবাহিত মেয়েদের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে নিজেকে আসক্ত করে। এনাম ও তার স্ত্রী’র মধ্যে বিবাহের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ চলছিল, তাই ওমান থাকাবস্থায় এনাম দ্বিতীয় বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং দেশে ফেরার পূর্বেই তার শশুরকে দ্বিতীয় বিবাহের জন্য মেয়ে দেখতে বলে। পরবর্তীতে এনাম দেশে ফিরেই দ্বিতীয় বিবাহের পায়তারা করতে থাকে এবং দেনমোহরের টাকার পরিমাণ বেশী হওয়ায় স্ত্রী’কে তালাক দিতে না পারায় স্ত্রী’র সামনেই বিভিন্ন মেয়েদের সাথে ভিডিও কলে বিভিন্ন অশালিক কথা বার্তা বলত, যাতে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এসব বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকলে স্ত্রী (নিহত ভিকটিম) তার বাবাকে বিষয়টি জানায়। এনামের ভাষ্যমতে তার স্ত্রী (ভিকটিম) একজন রোগী, রোগাক্রান্ত, দূর্বল ও সাংসারিক কাজকর্ম করতে ব্যর্থ তাই স্বামী মোঃ এনাম স্ত্রীকে তার দ্বিতীয় বিবাহের জন্য বাধা এবং পথের কাঁটা মনে করতে শুরু করে। ঘটনার দিন সকালে তার পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এনাম তার স্ত্রী’র উপর পাশবিক শারীরিক নির্যাতন করে তারই ব্যবহৃত উড়না দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মর্মে স্বীকার করে। উল্লেখ্য, তার স্ত্রীকে হত্যার পর স্ত্রী বিষপাণ করে আত্মহত্যা করেছে বলে ভিকটিমের পরিবারকে খবর দেয় এবং এলাকায় গুজব প্রচার করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে