শরীয়তপুরে দুইটি ফোরলেন সড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৯, ২০২৩, ০২:৩৫ দুপুর
ছবি সংগৃহীত
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ও শরীয়তপুর মনোহর বাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দুইটি ফোর লেন সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর শহর পর্যন্ত ফোর লেন সড়কটিতে ব্যয় হবে এক হাজার ৬শ’ ৮২ কোটি টাকা ও শরীয়তপুর মনোহর বাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ফোর লেন সড়কটিতে ব্যয় হবে ৮শ’ ৫৯ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। সড়ক বিভাগ শরীয়তপুর সূত্রে জানা গেছে নাওডোবা থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর ফোর লেন সড়কের কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে এ ফোর লেন কাজ শেষ হবে। এদিকে শরীয়তপুর মনোহর বাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ফোর লেন সড়কের কাজের অগ্রগতি (জমি অধিগ্রহণসহ) ৪০ শতাংশ। এটি ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ সড়ক দুটির কাজ সম্পন্ন হলে শরীয়তপুর জেলা উন্নয়ন অগ্রগতি গতিশীল হবে বলে আশা করছেন সকলেই।
শরীয়তপুর জেলা সদরের টেইলারিং ব্যবসায়ী আমিন টেইলার্সের স্বত্তাধিকারী মো: আমিন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সাথে আমাদের ব্যবসায়িক যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটির ফোর লেনের কাজ শেষ হলে আমাদের যাতায়াত যেমন আরাম দায়ক হবে তেমনি ব্যবসায়িক সফলতাও বেড়ে যাবে। কারণ ভালো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসা সম্প্রসারণ ও লাভজনক হওয়ার অন্যতম শর্ত। বর্তমানে এ সড়কটি অপ্রসস্ত হওয়ায় অনেক মালবাহী ট্রাক শরীয়তপুরে আসতে চায় না ঝুঁকির কারণে। তাই আমরা আশা করছি এ ২৭ কিলোমিটার ফোর লেন সড়কের কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হবেন।
শরীয়তপুর বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, জেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিবহণ খাতের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। বিএনপি আমলে সড়ক উন্নয়নের কাজ না হওয়ায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল পরিবহণ খাত। তবে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে গতি পেতে থাকে এ পরিবহণ খাত। তবে ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্যদিয়ে আড়মোড় ভেঙে জেগে ওঠে শরীয়তপুরের পরিবহণ ব্যবসা। বর্তমানে শুধু ঢাকার সাথে সরসরি বিলাসবহুল বাসই চলছে তিন শতাধিক। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর শরীয়তপুর-ঢাকা ও ঢাকা-শরীয়তপুর বিরতিহীন বাস চলাচল করছে। শুধু বাসেই তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। নাওডোবা-শরীয়তপুর ও মনোহর বাজার-ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৪ লেনের সড়ক দুটির কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের পরিবহণ খাত নতুন উদ্যমে জেগে উঠবে।
শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এম এম জাহাঙ্গীর বলেন, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ১৯৮৩ সালে জেলা প্রতিষ্ঠিত হলেও তুলনামূলক পেছনের দিক থেকে ৬৪ নাম্বর জেলায় অবস্থান ছিল আমাদের। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শরীয়তপুর আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত জেলা হওয়ায় যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতার ফলে ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়ন অগ্রগতিতে অনেকদূর এগিয়েছি। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন আমাদের শরীয়তপুর জেলার উন্নয়নের গতিকে রকেটের গতিতে পরিণত করেছে। ৫ দশকেরও বেশি সময় থেকে পদ্মা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে জাজিরা নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার ভাঙন কবলিত ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১০.২ কিলোমিটার সম্পন্নসহ বাকি স্থায়ী রক্ষা বাঁধের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ সড়কই পাকা হয়ে গেছে। চলমান ৪ লেন সড়ক দুটির কাজ শেষ হলে শরীয়তপুর আধুনিক সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে সারা দেশের সাথে বাণিজ্যিক মেলবন্ধন তৈরি হবে। এর মধ্যদিয়ে শরীয়তপুরের শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে না বাড়বে জীবন যাত্রার মানও।
সড়ক বিভাগ শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসাইন বলেন, চলমান দুইটি ফোর লেন সড়কের কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। শরীয়তপুর মনোহর বাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ফোর লেন সড়কটি শুধু শরীয়তপুরের আভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই গতিশলীল করবে না, এ আঞ্চলিক মাহ সড়কটি মংলা বন্ধর থেকে চট্টগ্রামের সাথে পোর্ট টু পোর্ট সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ফলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও বেশ বৃদ্ধি পাবে। এদিকে নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর ফোর লেন সড়কের কাজ শেষ হলে শুধু ঢাকাসহ সাড়া দেশের সাথে যাতা-য়াত শুধু আরাম দায়ক হবে না, সময়ও অনেক সাশ্রয় হবে। আমরা আশা করছি সড়ক দুটির কাজ গুণগত মান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট সমেয়র মধ্যেই শেষ করতে পারব। সড়ক দুটির কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের বাণিজ্যিক ও শিল্পায়নের সম্ভাবনাই বাড়বে না জীবন মানেরও পরিবর্তন হবে।