ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হারানো ছেলেকে ৩৩ বছর পর পেয়ে মায়ের আনন্দাশ্রু

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:০৪ বিকাল  

সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানিয়েছে এক বাস্তব কাহিনী। ৩৩ বছর আগে পথ ভুলে হারিয়ে যায় ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সাইংজুরী গ্রামের মৃত চেনু খার ছেলে হারেজ আলী। অনেক খুঁজে না পেয়ে পরিবার ও এলাকাবাসী এতদিন ধরেই নিয়েছিল যে, সে আর বেঁচে নেই। চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হারেজ বাড়ি ফিরলেন। ছেলেকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অশীতিপর মা ছবেলা বেগম।

হারেজের বৃদ্ধা মা, এক বোন, ভগ্নীপতি ও এক ভাগনে ছাড়া কেউ নেই। পিতৃহারা প্রিয় সন্তানের ফিরে আসার প্রহর গুনতে গুনতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে মায়ের। অবশেষে তার ফিরে আসা আনন্দের বান ডেকেছে পরিবারে। খুশির ঢেউ লেগেছে প্রতিবেশীদের মধ্যেও। কারো চোখে বিস্ময়, কারো চোখে আনন্দাশ্রু।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন হারেজ আলীর ছোটবেলা থেকেই গান বাজনার প্রতি ঝোঁক ছিল। ১৯৯০ সালে বের হয়েছিলেন বাড়ি থেকে। তার বয়স তখন ২৩ বছর, আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন আর গান শেখার নেশায় এক সাধু বাবার সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন তিনি। পরে পথ হারিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানাধীন হোগলডাংগা গ্রামের বাসিন্দা সোনাহার মণ্ডল ওরফে মতিয়ারের বাড়িতে ঠাঁই হয় তার। অবশেষে তার সন্ধান পায়  পরিবার। হারেজ আপন ঠিকানায় ফেরেন গত রবিবার রাতে। তাকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করে শত শত মানুষ।

ঘিওরের বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সাইংজুরী গ্রামের মৃত চেনু খার ছেলে হারেজ। টগবগে যৌবন নিয়ে বের হয়েছিলেন বাড়ি থেকে। ফিরেছেন পাকা চুল-দাঁড়ি নিয়ে। অসংলগ্ন কথা, তা-ও প্রয়োজন না হলে বলেন না। ঘিওর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানাধীন হোগলডাংগা গ্রামের মতিয়ার মণ্ডল ঘিওর থানা এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, তাদের বাড়িতে হারেজ ২৫ বছর যাবত বসবাস করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা থেকে স্থানীয় কয়েক জন গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ হারেজ আলীকে বাড়ি আনা হয়। হারেজের ছোট বোন নূরজাহান বেগম জানান, তার ভাই কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এবং অসুস্থ, কথা কম বলেন। একমাত্র ভাইকে ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত।

স্থানীয় বাসিন্দা সমাজসেবক আব্দুল মালেক দেওয়ান জানান, নিজ ঠিকানা বলতে না পারায় হারেজকে তার বাড়ি পৌঁছে দিতে পারেনি আশ্রয়দাতা। হারেজের আশ্রয়দাতা মোবাইল ফোনে বলেন, তাকে রাস্তায় পাগল বেশে খুঁজে পেয়ে বাড়িতে আশ্রয় দেন তিনি। পাঁচ সন্তানের সঙ্গে তাকেও নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করেন। ঠিকানা বলতে না পারায় এতদিন তাকে নিজ বাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি হারেজ তার বাড়ির ঠিকানা প্রসঙ্গে শুধু ‘ঢাকা মানিকগঞ্জ’ উল্লেখ করে। সেই থেকে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাড়ির ঠিকানার খোঁজ পান। তাকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু হারেজের জন্য তার বাড়ি ও প্রতিবেশীরা মন খারাপ করে কাঁদছে। 

ঘিওর থানার অফিসার ওসি আমিনুর রহমান বলেন, ‘১৯৯০ সালে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হারেজ আলী বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়াল খান আমাকে জানান যে, হারিয়ে যাওয়া সেই হারেজ চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক ব্যক্তির বাড়ি বসবাস করছেন মর্মে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ঘিওর থানা পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।’