ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দিনাজপুর ‘স্কোয়াশ’ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: মার্চ ০৪, ২০২৪, ১১:০৫ রাত  

ছবি সংগৃহীত

জেলার ১৩ উপজেলায় এবার কৃষকেরা নতুন ফসল স্কোয়াশ চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফসলটি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা ।  কয়েকজন কৃষক  জানান, বাজারে চাহিদা বাড়ছে ফলে লাভ হচ্ছে।

দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের  আদর্শ কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলে  জানা যায়, চাষবাদের মধ্যে ভালো লাভের জন্য এ সবজিটাই তাদের কাছে বেশি লাভজনক মনে হয়েছে। বর্তমানে টমেটো থেকে স্কোয়াশে বেশি লাভ হচ্ছে  । তিনি জানান, জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে নতুন জাতের এ সবজি স্কোয়াশ  সফলভাবে চাষ হয়েছে।  ক্ষেত থেকে পাইকাররা স্কোয়াশ বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে।
জেলার বিরল উপজেলার বাজনাহার গ্রামের কৃষক হরি বন্ধু জানান, তিনি এবার স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০ শতক জমিতে এ সবজি চাষ করেছে। তার অর্জিত সবজি স্কোয়াশ ভালোই হয়েছে।

বিরল উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ জমির উদ্দিন জানান, এ সবজিটি গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে সামার স্কোয়াশ চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে পারলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় কোনোভাবেই যেন বেশি জৈব সার বা গোবর সার না দেয়া হয়। কীটনাশক ও ইউরিয়ার সার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এজন্য ফসলটি নিরাপদ হিসেবে কৃষকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। ফসল সংগ্রহের ক্ষেত্রে চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহের সময় ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।

কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা শসা আকৃতির, এ সবজি লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়ার মতো। শীতকালীন উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নার উপযোগী। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিনি জানান, পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, স্কোয়াশ কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত, যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অতি পুষ্টিকর। সবজিটি ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে পারলে একদিকে যেমন কৃষিভিত্তিক পণ্যের আমদানি কমে যাবে। তেমনি ভালোভাবে প্রয়োগ ঘটলে রপ্তানি সম্ভব হবে।’ উচ্চমূল্যের ফসল চাষসহ জলবায়ুর ঝুঁকি এড়াতে এ সবজি মান সম্পূর্ণ। সবজিটি খাবারের জন্য সক্ষম লাগসই কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ,। আন্তঃফসলের আবাদের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিবিড়তা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্বল্প জীবনকালীন ফসলের উৎপাদন ও শস্য নিবিড়তা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক কৃষিতে আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেটি সফলতা অর্জনে সক্ষম হবে। জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে এ সবজি চাষে সব ধরনের উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এসব কৃষক এ সবজি চাষে সফলতা অর্জন করেছে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

‘দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি পরিচালক আশরাফুজ্জামান জানান,, দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের সার-বীজসহ সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। লাভজনক এ ফসটির উৎপাদন বাড়াতে আগামীতে এ অঞ্চলের সব উপজেলায় ব্যাপকভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ চলমান রয়েছে।