জলাবদ্ধ জমিতে ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৯:২০ রাত
ছবি সংগৃহিত
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চিনাডাঙ্গা বিলে এক সময় জলাবদ্ধতা ছিল ‘অভিশাপে’র মতো। কচুরিপানা আর কোমর পানি ঠেলে ফসল ফলাতে হতো। দুই বছর আগেও এখানে ছিল কোমর পানি। প্রায় সারা বছরই থাকত কচুরিপানা। চাষ করা যেত না। এ জলায় আউশ ধান হতো না। আমনও নষ্ট হয়ে যেত। কচুরিপানা সাফ করে শুধু বোরো চাষ করা যেত। সেজন্য বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা দিতে হতো শ্রমিকদের।সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে এখানকার কৃষকরা। কৃষি বিভাগের ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ হাসি ফুটিয়েছে এখানকার কৃষকদের মুখে।
জানা যায়, চিনাডাঙ্গা বিলের বাটরা অংশের বেশির ভাগ জমি প্রায় সারা বছর জলাবদ্ধ এ বিলে কোনো ফসল উৎপাদন হতো না। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ২০২১ সালে এ এলাকার চাষিদের ডালি পদ্ধতিতে ফসল চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর বাটরা গ্রামের আব্দুল মজিদ প্রথম ৯ শতাংশ জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে দারুণ সফলতা পান। বর্তমানে তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে ডালি পদ্ধতিতে লাউ, শিম, করলা ও শসা চাষ করেছেন। একই সঙ্গে বাঁশের তৈরি বানা দিয়ে জমিটুকু ঘিরে তাতে মাছ চাষ করছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানির ওপর বাঁশের খুঁটির ওপরে নাইলন সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে নিচে ছোট বাঁশের খুঁটির উপর নেট দিয়ে তৈরি ডালি বসানো হয়েছে। এসব ডালিতে টোপাপানা দিয়ে তৈরি কম্পোস্ট সার ও অল্প পরিমাণে মাটি দিয়ে তাতে বীজ রোপণ করা হয়েছে। সেখান থেকে জন্মানো গাছগুলো নাইলনের মাচার উপরে উঠে গেছে। সেসব গাছে থরে থরে ঝুলছে লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গেসহ নানান সবজি। নতুন এ পদ্ধতিতে চাষ দেখতে প্রতিনিয়ত আসছেন এলাকার কৃষকরা।
আরও পড়ুনঃ ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পিরোজপুরে ফসলের ক্ষতি
বাটরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ শিখেছি। এ পদ্ধতিতে রাসায়সিক সার ও কীটনাশক লাগে না, ফলনও আশানুরূপ। একবার তৈরি করা মাচায় দুই বছর পর্যন্ত চাষ করা যায়। প্রথমবার খরচ হলেও পরবর্তী ২-৩ বছর উৎপাদন খরচ লাগে না। আমার দেখাদেখি আশেপাশের অনেকেই ডালি পদ্ধতিতে নিজেদের জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করছেন। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, আমাদের সফলতা দেখে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমাকেসহ ৮-১০ জন কৃষককে টুঙ্গিপাড়ার বালাডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পৈত্রিক জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আলাল উদ্দীন বলেন, 'এই সময় সাধারণত আমার জমিতে পানি থাকে। তাই কোনো ফসল হয় না। কিন্তু এবার ফসল হচ্ছে। তাই আমি খুব আনন্দিত। আমার জমিতে ৩০টি ডালি স্থাপন করেছি। সেখানে করলা, কুমড়া ও লাউ লাগিয়েছি। করলা ও কুমড়ায় ফুল এসেছে। অনেক পরিশ্রমের পর ফসল আসায় খুব ভালো লাগছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, পতিত ও জলাবদ্ধ এসব জমিতে প্রথমে ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পান। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি বেশ সুস্বাদু। বর্তমানে বাটরা গ্রামের ২০ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষ করছেন। অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও বর্তমানে জলাবদ্ধ জমিতে এ চাষাবাদে ঝুঁকছেন।
সাবেক সিনিয়র সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, বড়াইগ্রামের চিনাডাঙ্গা বিলে প্রথম এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়। সেটা সফল হওয়ার পরে আমরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শুরু করেছি। বর্তমানে গোপালগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় এটা ছড়িয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে আমাদের দেশের অধিকাংশ জমি তলিয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে বর্ষাকালে ওই সব জমিতে সবজি চাষ করা যেতে পারে।
ডালি পদ্ধতির উদ্ভাবক এবং প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। কচুরিপানা পচা মাটিতে সবজি লাগানোর ফলে অর্গানিক সার পাওয়া যায়। আর এটা ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা হয়।
২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন